হঠাৎ জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, অথবা সর্দি-কাশি-- উপসর্গ খুব একটা মারাত্মক না-হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না অনেকেই। বরং, ওষুধের দোকানে গিয়ে পছন্দমাফিক অ্যান্টিবায়োটিক কিনেই নিজেদের চিকিৎসা চালান অধিকাংশ মানুষ। তাতে অনেকক্ষেত্রেই প্রতিকারও মেলে, এ-কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই। এখন যদি বলা হয়, এই অভ্যাসই ক্রমে ঘাতক করে তুলছে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রোবদের?
ব্যাপারটা শুনে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এমনটাই বলছেন গবেষকরা। ১৯২৮ সাল। স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং-এর হাত ধরেই আবিষ্কৃত হয়েছিল এক মহৌষধি। পেনিসিলিন। আদতে যা অ্যান্টিবায়োটিক। পরবর্তীতে যার ব্যবহারে এক ধাক্কায় মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণ সংক্রান্ত মৃত্যুর হার কমেছিল ৫০ শতাংশ। তবে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারই ক্রমে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে মানুষের কাছেই। এমনকি সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে পরোক্ষাভাবে চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ। যার কাছে হার মানে বছরপিছু এইডস কিংবা ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুর পরিসংখ্যানও। কিন্তু এমন অদ্ভুত ঘটনার কারণ কী?
বিজ্ঞানের পরিভাষায় বিষয়টিকে বলা হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স। আসলে একই অ্যান্টিবায়োটিকের বহুল-ব্যবহারের ফলে ক্রমে বিবর্তিত হয় ব্যাকটেরিয়া। বদলে যায় তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও। ফলে এসব ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রোবদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক। ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতাও কমছে তাদের।
বিশেষভাবে অভিযোজিত এইধরনের মাইক্রোবদের গবেষকরা চিহ্ণিত করছেন 'সুপার বাগ' নামে। এই সুপার বাগের কারণেই চলতি বছরে মৃত্যু হয়েছে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের। উল্লেখ্য, এই তালিকায় রয়েছে ভারতও। প্রশ্ন থেকে যায়, এই সমস্যার সমাধান কী তবে?
প্রথমত, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি বন্ধ করার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা। পাশাপাশা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমাতে শুরু হয়েছে বিকল্পের অনুসন্ধান।ন্যানোপার্টিকলের ব্যবহারে মাইক্রোব প্রতিরোধের গবেষণা চলছে পুরোদমে। অবশ্য প্রথাগত চিকিৎসায় সেই পদ্ধতি আসতে এখনও ঢের দেরি। ততদিন পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিকের সতর্ক ব্যবহারই একমাত্র প্রাণঘাতী অণুজীবদের থেকে রক্ষা করতে পারে আমাদের...
Powered by Froala Editor