বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে একমাত্র মেয়ে। তার জন্য বাবা-মার উদ্বেগ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেই উদ্বেগ যদি পুলিশের তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে? ঠিক তেমনই এক পরিস্থিতিতে ভয়ানক ধমক খেলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্যের আসন্ন সিনেমা ‘অন্তর্ধান’-এর (Antardhaan) ট্রেলারেই দেখা গিয়েছে সেই দৃশ্য। আর অভিনেতা পরমব্রতর উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছেন অক্ষয় কাপুর (Akshay Kapoor)। না, তিনি একেবারে নবাগত নন। কিন্তু বাংলা সিনেমায় এতটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আগে দেখা যায়নি তাঁকে। অক্ষয় নিজেই বলছিলেন, “সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগে তো খুব বেশি কিছু বলা যাবে না। তবে এটুকু বলতে পারি, এই চরিত্রটিকে দেখার পর অনেক অভিনেতাই আফসোস করবেন।”
তবে ‘অন্তর্ধান’-এর সঙ্গে তাঁর জড়িয়ে যাওয়াও আশ্চর্যভাবে। এই চরিত্রটির জন্য কোনো অডিশনও নেননি পরিচালক। অথচ তিনি যে অক্ষয়কে চিনতেন, এমনও নয়। কেবলমাত্র পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অরিন্দম বলছিলেন, “অক্ষয়কে আমি প্রথম দেখি কশৌলিতে শুটিং-এর সময়।” তবে তাঁর ভুল ভাঙিয়ে দিলেন অক্ষয়। লুক টেস্টের সময় একবার দেখা হয়েছিল, তবে সে-কথা মনে নেই অরিন্দমের। মনে আছে প্রথম দিনের শুটিং-এই অক্ষয়ের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। “অভিনয়ের কী দাপট! পরমকে এক ধমকে চুপ করিয়ে দিল।” বিস্ময়ের সঙ্গে বলছিলেন অরিন্দম। অবশ্য প্রথম সিনেমা ‘হেমলক সোসাইটি’-তেই পরমব্রতর সঙ্গে কাজ করেছেন অক্ষয়। পরে আবার ‘যখের ধন’-এ আলাপ। বরং রজতাভ দত্তের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা এই প্রথম। আর এখানে তিনি রজতাভর ঊর্ধতন আধিকারিক। এমন রথী-মহারথীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? অক্ষয় জানালেন, “বাংলা সিনেমার স্টার অভিনেতারা প্রত্যেকেই তরুণ অভিনেতাদের সঙ্গে ভীষণ সহযোগিতা করেন। এটা মানতেই হবে।”
কলকাতা শহরেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা অক্ষয় কাপুরের। তবে সিনেমার পর্দায় তাঁকে বরাবর অবাঙালি চরিত্রেই দেখা গিয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তাঁর। কারণ প্রতিটা চরিত্রই বৈচিত্রে ভরা, এমনটাই মনে হয়েছে তাঁর। দুই প্রজন্ম আগে অক্ষয়ের ঠাকুর্দা চলে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। তিনি ছিলেন হিন্দমোটরের জেনারেল ম্যানেজার। তারপর সেই কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁর পরিবারেরও অনেকেই ফিরে গিয়েছেন দিল্লিতে। কিন্তু অক্ষয় ফিরতে চান না। হাসতে হাসতে বলেন, “অভিনয়ের জন্য মুম্বাই যাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে। তবে এখন তো কলকাতাতেই জাতীয় স্তরের কাজ হয়। তাই কলকাতা ছাড়ার কোনো পরিকল্পনাই নেই।” তাহলে কি কলকাতায় থেকে যাওয়া শুধুই অভিনয়ের টানে? হাসিতে সম্মতি জানিয়ে দেন অক্ষয়। সেই কলেজ জীবন থেকেই জড়িয়ে পড়া অভিনয়ের সঙ্গে। কলকাতার বেশ কিছু নাট্যদলের হয়ে নাটক লিখেছেন, অভিনয় করেছেন। তাঁর লেখা এবং নির্দেশিত একটি নাটক জাতীয় স্তরের যুবনাট্য প্রতিযোগিতা ‘থেপসো’-তে পুরস্কৃতও হয়েছে। ২০১১ সালে তাঁর একটি নাটক দেখতে এসেছিলেন সৃজিত মুখার্জি। আর তখনই ‘হেমলক সোসাইটি’-র জন্য কথাবার্তাও হয়ে যায়। তবে পরে অনেক সিনেমাতেই সুযোগ পেয়েও রাজি হননি অক্ষয়। পুরোপুরি সিনেমার মধ্যে ঢুকে গেলে নাটকের মঞ্চকে হারাতে হবে যে। এখনও নাটকের মঞ্চের প্রতিই আত্মীয়তার টান অনুভব করেন তিনি। তবে এবার নাটকের মঞ্চ ছেড়ে পুরোপুরি সিনেমাতে আসার কথাই ভাবছেন। আর ঠিক এমন সময়েই এসে গেল ‘অন্তর্ধান’ সিনেমাটিতে অভিনয়ের সুযোগও। অতিমারীর কারণে বারবার তার মুক্তির দিন পিছিয়েছে। তবে অপেক্ষার অবসান হতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। ১০ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে ‘অন্তর্ধান’। আর এই সিনেমা অতিমারী পরবর্তী সময়ে দর্শককে আবার হলমুখী করবে বলেও আশাবাদী অক্ষয়। মানুষ সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা করবেন, এই প্রত্যাশা তো থেকেই যায়। পাশাপাশি পরিচালকের বিশ্বাস, অক্ষয় কাপুরের অভিনয় মুগ্ধ করবে সকলকে।
Powered by Froala Editor