১৯১১ সাল। আন্টার্কটিকার তুষারাবৃত ভূখণ্ড আবিষ্কার করেন নরওয়েজিয়ান অভিযাত্রী রোনাল্ড আমান্ডসেন। স্বাভাবিকভাবেই ‘অজানা’ আন্টার্কটিকার অদ্ভুত ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র সে-সময় নজর কেড়েছিল গবেষক এবং ভূ-পর্যটকদের (Tourists)। খুব অল্পসময়ের মধ্যেই গড়ে সেখানে ওঠে একাধিক রিসার্চ বেস। তবে বর্তমানে গবেষণার কাজ ছাড়াও, আন্টার্কটিকায় বাণিজ্যিক পর্যটনের মাত্রা বেড়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। পরোক্ষভাবে এই পর্যটন শিল্পই (Tourism) ডেকে আনছে আন্টার্কটিকার (Antarctica) মৃত্যু— সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়।
আজ থেকে পাঁচ-ছ’দশক আগেও আক্ষরিক অর্থে আন্টার্কটিকা ছিল দুর্গম। তবে প্রযুক্তি এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির কারণে আন্টার্কটিকা অভিযান এখন অনেকটাই সহজ। ফলে বৈজ্ঞানিক ছাড়াও আন্টার্কটিকায় ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। নিছকই বরফরাজ্যে ভ্রমণের নেশায়। পরিসংখ্যান বলছে শুধু ২০১৯-২০ মরশুমেই আন্টার্কটিকায় হাজির হয়েছিলেন ৭৪ হাজারের বেশি পর্যটক। তাছাড়াও পৃথিবীর দক্ষিণতম মহাদেশে ৭০টির বেশি গবেষণাগারের ‘স্থায়ী’ বাসিন্দা সহস্রাধিক গবেষক।
মানুষের এই কার্যকলাপের কারণেই দ্রুত হারে গলছে আন্টার্কটিকার বরফের চাদর। জাহাজ এবং অন্যান্য যানবাহনের কার্বন নির্গমন তো রয়েছেই, তার সঙ্গে পর্যটকদের শারীরিক উত্তাপ ও মানব বর্জ্য দায়ী আন্টার্কটিকার কার্বন ফুটপ্রিন্ট বৃদ্ধির জন্য। যদিও আন্টার্কটিক চুক্তি অনুযায়ী মানব বর্জ্য অপসারণ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিশেষ বৈজ্ঞানিক দল রয়েছে আন্টার্কটিকায়। তা সত্ত্বেও ব্ল্যাক কার্বন জাতীয় বর্জ্যের নিষ্পত্তি হয় না বললেই চলে। ফলে, তার দরুন বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত বাড়তে থাকে আন্টার্কটিকার তাপমাত্রা।
সম্প্রতি নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণা জানাচ্ছে প্রতি পর্যটকের জন্য গড়ে ৮৩ টন বরফ গলছে আন্টার্কটিকার বুক থেকে। আন্টার্কটিকার ২০০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পর্যটনযোগ্য। এই অঞ্চলের ২৮টি পৃথক পৃথক অবস্থান থেকে নতুন সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকরা। তার বিশ্লেষণেই উঠে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। আন্টার্কটিকায় প্রতি গ্রাম তুষারের স্তরের মধ্যে রয়েছে ১ ন্যানোগ্রাম ব্ল্যাক কার্বন। যা প্রতি বছর আন্টার্কটিকার বরফের চাদর ২৩ মিলিমিটার কমিয়ে দিতে সক্ষম। পাশাপাশি ব্ল্যাক কার্বনের উপস্থিতি আন্টার্কটিকার স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র এবং মিথস্ক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে চলেছে ক্রমশ।
আরও পড়ুন
আন্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্রে মিশছে বিদেশি প্রজাতি, বাসা বাঁধছে কাঁকড়া এবং ঝিনুকও
পৃথিবীর সার্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধির থেকেও আন্টার্কটিকার এই দ্রুত বরফ গলনের কারণ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে গবেষকদের কপালে। বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপ ছাড়া পর্যটনে নিয়ন্ত্রণ টানার আবেদন জানাচ্ছেন গবেষকরা। কিন্তু আদৌ কি সেই ডাকে সাড়া দেব শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি? কেননা, আন্টার্কটিকা পর্যটনশিল্পের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ…
আরও পড়ুন
আয়তনে ব্রিটেনের সমান, এক দশকের মধ্যেই গলে যেতে পারে আন্টার্কটিকার হিমবাহ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আন্টার্কটিকার বুকে একমাত্র খুনের চেষ্টা, নেপথ্যে একটি গল্পের বই!