কেবল লাঞ্ছনা আর অবমাননাই দেখে এসেছেন তাঁরা। স্বীকৃতি বলতে যেটুকু পেয়েছেন, তাতেও প্রান্তিক হিসাবে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে সমাজ। তাঁরা হেরে যাওয়ার মানুষ নন। নিজেদের পাশে নিজেরা এসে দাঁড়িয়েছেন বারংবার। হ্যাঁ, তাঁরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তাঁদের জন্য হাসপাতালে নেই কোনও আলাদা ওয়ার্ড। নেই কোনও বিশেষ ব্যবস্থা। বলা ভালো, এতদিন ছিল না। এবার সেই সমস্যার সমাধান করল ‘অন্তর’। গতকাল, অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি, বিকেলে উদ্বোধন হল বাংলার প্রথম এই ট্রান্সজেন্ডার মেডিক্যাল ক্লিনিকের। যেখানে শুধুমাত্র তাঁরাই বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পাবেন।
হাসপাতালে গেলে এতদিন নানা রকম বৈষম্য ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে এই মানুষদের। কখনও বাঁকা চোখে তাকানো, কখনও বিদ্রুপ— শারীরিক যন্ত্রণার উপশম ঘটাতে গিয়ে চেপে বসত মানসিক অবসাদও। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তো সে একজন রোগী। তা সত্ত্বেও কেন এরকম করা হবে? এই ভাবনা থেকেই ‘অন্তর’-এর পথ চলা শুরু। প্রান্তকথা ও অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রান্সজেন্ডার অ্যান্ড হিজড়া’স ইন বেঙ্গলের (এটিএইচবি) যৌথ উদ্যোগে অবশেষে এই ক্লিনিকের শুরু হল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শহরের দুটি সংস্থা— পিয়ারলেস হাসপাতাল ও বি কে রায় রিসার্চ সেন্টার। প্রায় ছ’মাস সময় ধরে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে। অন্তর চায় এই মানুষগুলির চিকিৎসা করা হোক তাঁদের সমমনস্ক হয়ে।
উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নারী ও শিশু বিকাশ মন্ত্রী ডঃ শশী পাঁজা, আমেরিকান সোসাইটির ডিরেক্টর মনিকা শিয়ে। এছাড়াও ছিলেন ‘অন্তর’-এর ইনচার্জ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক, প্রান্তকথা’র তরফ থেকে বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় ও এটিএইচবি-র তরফে রঞ্জিতা সিনহা।
এখন থেকে আপাতত প্রতি মাসে দু’দিন বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ডাক্তারের পরামর্শ পাওয়া যাবে এখানে। ধীরে ধীরে অন্যান্য পরিষেবাও সংযুক্ত হবে বলে জানা গেছে।
কলকাতা আমেরিকান সেন্টারের মূল অনুষ্ঠানটি ছিল ‘রামধনুকথা’ শীর্ষক একটি যৌথ সম্মেলন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যুব ও এলজিবিটি সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনেরই একটি অংশ ‘অন্তর’ এর উদ্বোধন।