প্রতিদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ১৫০টি করে প্রজাতি। কিছু প্রজাতিকে চিহ্নিতকরণ করতে পেরেছি আমরা। কিন্তু প্রজাতি অজানা অবস্থাতেই হারিয়ে যাচ্ছে এই পৃথিবী থেকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রয়েছে এই মানব সভ্যতার হাতই। এবার পৃথিবী থেকে মুছে গেল বিরল একটি প্রাণী। স্মুথ হ্যান্ডফিশ।
নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে প্রাণীটির বিচিত্র বৈশিষ্ট্য। সাধারণ মাছের মতই ফুলকা, আঁশ এবং সাতটি পাখনার উপস্থিতির সঙ্গে প্রাণীটির দেহে দেখা যেত একজোড়া হাতের মত অঙ্গ। শরীরে ছিল না ব্লাডারও। ফলে সাঁতার কাটতে পারত না এই বিশেষ প্রজাতি। বরং হাতের মত অঙ্গ দুটি দিয়েই সমুদ্রতলে চলাফেরা করত তারা। মূল খাদ্য ছিল সামুদ্রিক ছোটো মাছ। শিকারকে আকর্ষিত করার জন্য মাথায় থাকত উজ্জ্বল একটি অ্যান্টেনা।
১৮০০ সালে প্রথম মানুষের চোখে ধরা দিয়েছিল এই বিরল প্রজাতির মাছ। ফ্রান্সের প্রাণীবিদ ফ্রানসিস ফেরোঁ সামনে এনেছিলেন এর উপস্থিতি। পরে আবিষ্কৃত হয়েছিল হ্যান্ডফিশের মোট ১৩টি প্রজাতি। তবে ক্রমশ বিলুপ্ত হতে হতে ২০০০ সালে অবশিষ্ট ছিল মাত্র ৪টি প্রজাতি। সারা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে যেতে কেবল মাত্র অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যেত এই একমাত্র প্রজাতিকে। এবার পুরোপুরিই পৃথিবী থেকে মুছে গেল তাদের অস্তিত্ব।
একদিকে যেমন দূষণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাদের বসবাস। তেমনই বেড়েছিল মৃত্যুর হার। একটি গবেষণা উল্লেখ পাওয়া যায়, সমুদ্রতলে বসবাসের জন্য প্রায়শই নষ্ট হত তাদের ডিম। ফলে হ্রাস পেয়েছিল বংশবিস্তার। পাশাপাশি মৎস্য-শিকারের প্রভাবেও কমেছিল সংখ্যা। সরাসরি এই মাছ ধরা না হলেও, ঝিনুক ধরার জালে আটকে পড়ত এই প্রাণীরা। পরোক্ষভাবে প্রাণ যেত তাদের। ১৯৬৭ সালে এই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য বেশ কিছু অঞ্চলে নিষিদ্ধও হয়েছিল মৎস্য-শিকার। তবে তার পরেও রক্ষা করা গেল না বিচিত্র এই প্রজাতিকে।
ইন্সটিটিউট অফ মেরিন এন্ড আন্টার্কটিক স্টাডিসের এক গবেষক সম্প্রতি জানান, এই প্রজাতিটির সম্পর্কে নেই সেইভাবে বিস্তৃত কোনো গবেষণাও। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের আগেই মুছে গেল তাদের অস্তিত্ব। একদিকে এই লকডাউনে যখন অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণী, উদ্ভিদের দেখা মিলছে; ঠিক সেই সময়ই বিরল একটি প্রজাতির হারিয়ে যাওয়ায় আশঙ্কায় বিজ্ঞানীরা। শুধুই কি হ্যান্ডফিশ? খনন, মৎস্যশিকার, বনভূমি ধ্বংস। সার্বিকভাবে মানুষের ক্রিয়াকলাপে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার প্রজাতি। তাদের বিলুপ্তির প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্যেও। তাও কি সচেতন হচ্ছে সভ্যতা?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পেটে বর্শা ঢুকিয়ে হত্যা, আফ্রিকায় মারা গেল বিলুপ্তপ্রায় গরিলা