মাস ঘুরতে না ঘুরতেই তুরস্ক সরকারের ধর্মীয় আগ্রাসনের মুখে আরেকটি আন্তর্জাতিক মিউজিয়াম। চোরা মিউজিয়াম চত্ত্বরে থাকা প্রায় ১৬০০ বছরের প্রাচীন গ্রিক গির্জাকে এবার মসজিদে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট তাইপ এর্দোগান। জুলাই মাসের শুরুতেই হেগিয়া সোফিয়া মিউজিয়াম মসজিদে রূপান্তরিত হয় আদালতের নির্দেশে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সারা পৃথিবীর ধর্মনিরপেক্ষ এবং মানবতাবাদী মানুষ সোচ্চার হলেও প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে বিদেশিদের কোনো মন্তব্য তিনি শুনতে রাজি নন। কিন্তু তুরস্কের মানুষও কি এই ইতিহাস-বিকৃতি মেনে নিয়েছেন? তাঁদের মত প্রকাশের কোনো সুযোগই অবশ্য রাখেনি স্বৈরাচারী সরকার।
তুরস্কের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু প্রাচীন গ্রিক সাম্রাজ্যের ইতিহাস। সেই গ্রিক শাসনকালে আনুমানিক চতুর্থ শতকের শেষদিকে প্রতিষ্ঠিত হয় চোরা চার্চ। মূল নাম ছিল চার্চ অফ দি হোলি সেভিয়ার ইন দ্য কান্ট্রি। কিন্তু নগরের বাইরে অবস্থানের কারণে চোরা চার্চ বলেই পরিচিত হয়ে ওঠে এই গির্জা। পরে সম্রাট দ্বিতীয় থোরেসিয়াস নগরের সীমানা বিস্তৃত করলেও নাম আর বদলায়নি। এরপর ইউরোপের বিখ্যাত ক্রুসেড, কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন এবং তুরস্কের জন্ম বৃত্তান্ত তো মোটামুটি সবার জানা। তখনই ষোড়শ শতকে এই গির্জা রূপান্তরিত হয় মসজিদে। কিন্তু ১৯৪৫ সাল থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতার স্রোত এসে পড়ে তুরস্কেও। তখন চোরা গির্জা এবং তার আশপাশের এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠে একটি মিউজিয়াম। এতদিন সেখানে দেশবিদেশের বহু দর্শক ভিড় করতেন। সাক্ষী থাকতেন বিখ্যাত ক্রুসেড এবং তুরস্কের আরও অনেক ইতিহাসের। তবে শেষ পর্যন্ত মৌলবাদীদের কোপের সামনে হার মানতেই হল ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতাকে।
১৪৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হেগিয়া সোফিয়া গির্জাও মসজিদে পরিণত হয়েছিল ক্রুসেডের পর। কিন্তু ১৯৪৮ সালে সেখানেও মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছিল। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদাও পেয়েছিল দুটি মিউজিয়ামই। ইতিহাসের নীরব সাক্ষী ছিল এইসব মিউজিয়াম। আর সেখানে সেই ইতিহাস খুঁজতে যাবেন না কেউ। মসজিদ তো গড়ে তোলাই যায়। কিন্তু যে স্থাপত্যের গায়ে ইতিহাসের গন্ধ লেগে থাকে, তার বিকল্প কোথায়? এভাবেই কি হারিয়ে যাবে ইতিহাস?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিস্ফোরণে আশঙ্কাজনক লেবাননের ৬০টি স্থাপত্য, সাহায্যের হাত বাড়াল ইউনেস্কো