প্রাণীজগতের ইতিহাস বর্ণনা করে জীবাশ্মবিদ্যার ‘নোবেল’ মার্কিন গবেষকের

ধূসর প্রান্তরের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোট্ট একটি পাথুরে টিলা। আমার আপনার মতো আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের কাছে এই ছোট্ট টিলা নিতান্তই একটি প্রাকৃতিক গঠন। তা যে খুব দৃষ্টিনন্দন, তেমনটাও নয়। তবে মার্কিন গবেষক অ্যান্ড্রু নলের (Andrew Knoll) কাছে এটাই স্বর্গরাজ্য। কেননা এই পাথুরে টিলার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পৃথিবীর ইতিহাস, আমাদের তথা গোটা প্রাণীজগতের ইতিহাসের গল্প। যা হলিউডের ব্লকবাস্টার সাইফাই সিনেমার প্লটের থেকেও বেশি আকর্ষণীয়। 

হ্যাঁ, বিগত কয়েক দশক ধরেই ভূমণ্ডলের শিলাস্তর পরীক্ষা করে প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীর রহস্য ও ইতিহাস উদ্ঘাটন করেছেন অ্যান্ড্রু নল। শুধু টিলা নয়; পাহাড়ের শৃঙ্গ, খাড়ি, নদী-উপত্যকা— এসব কিছুর গঠনের মধ্যেই বাহিত হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাস। এমনটাই বিশ্বাস প্যালিওন্টলজিস্ট অ্যান্ড্রু নলের। সবমিলিয়ে পৃথিবীর শেষ ৩ বিলিয়ন বছরের গল্প রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। পৃথিবীর ইতিহাসের রহস্যোন্মোচনের জন্য এবার কিংবদন্তি এই মার্কিন জীবাশ্মবিদই পেতে চলেছেন রয়্যাল সুইডিস অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের ক্রাফুর্ড পুরস্কার (Crafoord Prize)। যা জীবাশ্মবিদ্যার জগতে নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য এবং পরিপূরক। 

১৯৮৬ সালের কথা। অ্যান্ড্রু নল অভিনব এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন পৃথিবীর ইতিহাস বোঝার জন্য। পাললিক বা আগ্নেয়শিলায় জৈব কার্বনের পরিমাণ বুঝতে ব্যবহার করেন কার্বন আইসোটোপের অনুপাত। তা দিয়েই যেমন শিলার বয়স নির্ণয় করা সম্ভব, তেমনই সমানভাবে বলা সম্ভব তৎকালীন সময়ে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ। আর এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েই পৃথিবীর ইতিহাস নির্ণয় করেন অ্যান্ড্রু নল। 

আজ ডাইনোসরদের অবলুপ্তির কাহিনি আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। সেই কাহিনির নেপথ্যেও রয়েছেন এই মার্কিন বিজ্ঞানী তথা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। শুধু তাই-ই নয়। ডাইনোসরদের আগেও পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল এবং তাদের গণঅবলুপ্তির কারণও প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন অ্যান্ড্রু। আফ্রিকা, চিন, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল-সহ বিশ্বের মানচিত্রের একাধিক দেশে গবেষণা চালিয়েছেন অ্যান্ড্রু। নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিক ‘প্রত্নতাত্ত্বিক’ অভিযানের। তাঁর বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ আর্থ: ফোর বিলিয়ন ইয়ারস ইন এইট চ্যাপ্টার্স’ আজও প্রামাণ্য প্যালিওন্টলজিস্ট ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের কাছে। 

আরও পড়ুন
আইনস্টাইনের ‘বাস্তবতা’-কে চ্যালেঞ্জ ভারতীয় গবেষকদের

অ্যান্ড্রু নলের এই বিস্তারিত কর্মকাণ্ড ও গবেষণাকেই এবার স্বীকৃতি জানাল রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। এর আগে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর বায়োলজি, ওয়ালাস্টোন মেডেলের মতো সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এবার আরও একটি পালক জুড়ল তাঁর মুকুটে…

আরও পড়ুন
সবুজ বিপ্লবের নেপথ্যে তিনি, মরণোত্তর পদ্মভূষণ ভারতীয় গবেষকের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জার্মান শেফার্ডের কবিতাপাঠ! নাৎসি গবেষকদের দৌলতে কুকুরও হয়ে উঠেছিল বাঙ্ময়

More From Author See More