অন্ধ্রপ্রদেশের বিরাট এলাকা পরিচালনা করার জন্য একাধিক রাজধানীর প্রয়োজনীয়তার কথা উঠেছিল আগেই। নানা আইনি জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে মিলেছে রাজ্যপালের অনুমতিপত্রও। কিন্তু তার পরেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। অবশ্য এই বিতর্ক একাধিক রাজধানীর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নয়। বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিশাখাপত্তনম শহরে রাজধানী গড়ে তোলা নিয়ে। এই ঐতিহ্যশালী পর্যটনকেন্দ্র প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক সৌধের এক অদ্ভুত মেলবন্ধনের জায়গা। তবে সরকারের সাম্প্রতিক পরিকল্পনায় সেই সমস্ত ঐতিহাসিক সৌধের রক্ষণাবেক্ষণের কোনোরকম ব্যবস্থা তো নেওয়া হয়নি, তার মধ্যে দ্রুত নগরায়নের পরিকল্পনা ইতিহাসের জন্য সংকট ডেকে আনবে বলেই মনে করছেন স্থানীয় মানুষ।
ইস্পাত শিল্পের রাজধানী বিশাখাপত্তনমে এতদিন কোনোক্রমে টিকে থেকেছে ইতিহাসের নানা নিদর্শন। কিন্তু রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইতিমধ্যেই শহরের বুকে একটি গেস্ট হাউস তৈরির পরিকল্পনা ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন মানুষ। তাঁদের দাবি, গেস্ট হাউসের জন্য যে ১২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার ১ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থান করছে থোতলাকোন্ডা বৌদ্ধবিহার। আনুমানিক দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই বৌদ্ধবিহার। অর্থাৎ প্রায় দুহাজার বছরের পুরনো স্থাপত্য এটি। এখনও ইতিহাসের টানে আসেন বহু পর্যটক। কিন্তু তার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা তো করা হয়নি, উপরন্তু এলাকাকে ঘিরে ব্যস্ত নগর গড়ে উঠলে সংকট আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
বিশাখাপত্তনম ছিল বহু প্রাচীন কলিঙ্গ রাজ্যের একটি শহর। এই কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমণের সময়েই সম্রাট অশোকের মধ্যে মানসিক পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। অশোক এবং পরবর্তী নানা সম্রাটের পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য বৌদ্ধ উপাসনাক্ষেত্র। কিন্তু সেইসব ঐতিহাসিক সৌধের কোনো পরিচর্যা হচ্ছে না বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি সরকারি হিসাবে এইসব ঐতিহাসিক সৌধের সংখ্যাও অনেক কম দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। যদিও অন্ধ্র সরকারের পর্যটনমন্ত্রী শ্রীনিবাস রাও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, সমস্ত ঐতিহাসিক স্থাপত্যের যথাযথ পরিচর্যার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কাঙ্গিতেন - জাপানি গণেশ নাকি প্রাচীন বৌদ্ধতন্ত্রের দেবতা?