সাজো সাজো রব অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার সিধি গ্রামে। বেলুন দিয়ে সাজানো হয়ে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর। হাজির হয়েছেন শতাধিক গ্রামবাসী। ভেতরে নতুন জামা-কাপড় পরে হাসি মুখে চেয়ার টেবিলে বসে এক ভদ্রলোক। বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে তাঁর শরীরে। তাঁর জন্যই আয়োজন করা হয়েছে কেকের।
না, কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়। দীর্ঘ আড়াই দশক পর অবশেসে সুবিচার পেলেন অন্ধ্রের এই ব্যক্তি। আর সেই কারণেই উচ্ছ্বসিত গোটা গ্রাম।
আলাক্কা কেদারেশ্বর রাও (Alakka Kedaraswar Rao)। ১৯৯৮ সালে ডিস্ট্রিক্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন তিনি। পশ্চিমবাংলায় সরকারি স্কুল শিক্ষক হতে গেলে যেমন টেট কিংবা স্কুল সার্ভিস কমিশন-এর পরীক্ষা দিতে হয়, অন্ধ্রে তেমনই ডিএসসি। তবে পরীক্ষায় পাশ করলেও, সে-সময় চাকরি জোটেনি কেদারেশ্বরের। শুধু তিনিই নয়, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি ১৯৯৮-এর ব্যাচের প্রায় চার হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী। দীর্ঘ ২৫ বছর পর অবশেষে সেই ফাইল পাশ করল অন্ধ্র সরকার। চাকরি পেলেন কেদারেশ্বর রাও-এর মতো আরও বহু মানুষ।
গণিতে স্নাতকতা করার পর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯২ সালে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড শেষ করেন কেদারেশ্বর। তারপর শুরু হয় সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। ’৯২, ’৯৪ এবং ’৯৬ সালে স্কুল শিক্ষকের চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম দুবার লিখিত পরীক্ষা পাশ করলেও মৌখিক রাউন্ড থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। ’৯৬ সালের পরীক্ষায় প্রতিটি ধাপই সফলভাবে উত্তীর্ণ হন কেদারেশ্বর। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল। কিন্তু জালিয়াতি ও অন্যান্য কারণে থমকে থাকে নিয়োগের প্রক্রিয়া।
সে-সময় গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে অনেকে মামলা লড়েছিলেন অনেকেই, তবে সামর্থ্য ছিল না কেদারেশ্বরের। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাঁকে হার মেনে নিতে হয়েছিল ভাগ্যের কাছে। পরিবারের হাল টানতে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। খুলেছিলেন ছোট্ট একটি কাপড়ের দোকান। সে দোকানও চলেনি খুব বেশিদিন। শেষে সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি কাপড় বিক্রি করে বেড়াতেন সিধি গ্রামের মেধাবী ছাত্র।
বছর দুয়েক আগে। তাঁদের গ্রামে এক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে হাজির হয়েছিলেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডি। সে-সময় তাঁর কাছে সুবিচার চেয়ে বিনীত আবেদন জানান কেদারেশ্বর। শেষ পর্যন্ত সেই আবেদনই ভাগ্য খুলে দিল তাঁর। সরকারি স্কুলে চাকরি পেলেন কেদারেশ্বর এবং তাঁর ব্যাচমেটরা। উৎসব না হলে যে বেমানান হয়ে পড়ে এমন দিন।
বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস নেবেন তিনি। তবে তাঁর হাতে আর মাত্র তিন বছর। এখন যে তাঁর বয়স দাঁড়িয়েছে ৫৭-তে। অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না তাঁর। শিক্ষক হিসাবে স্কুলের গণ্ডিতে পা রাখার সেই আনন্দেই ফুটছেন অন্ধ্রের প্রৌঢ়…
Powered by Froala Editor