মাটির ভেতর থেকে পাওয়া গেল প্রাচীন আমলের প্রত্নসামগ্রী। ভারতের মতো প্রাচীন সভ্যতার দেশে আরও কত কি ঐশ্বর্য লুকিয়ে আছে! কিন্তু এখানেই বিস্ময়ের শেষ নেই। প্রত্নসামগ্রী পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশেষজ্ঞরা অবাক হয়ে দেখেন, ওর গায়ে লেগে আছে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কার্বন কণা; যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘ন্যানোপার্টিকল’। এর আগে পৃথিবীর কোনো সভ্যতায় এমন জিনিস পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি তামিলনাড়ুর কিলাডি থেকে প্রাপ্ত এই সামগ্রী গোটা বিশ্বের ঐতিহাসিক ও বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মাটির নিচে খননকাজ চালিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেখান থেকে বেশ কিছু পুরনো মাটির পাত্রের অংশবিশেষ উদ্ধার করেছেন। প্রাথমিক পরীক্ষার পর জানা যায়, পাত্রগুলি আনুমানিক ২৬০০ বছরের পুরনো। তবে সেইসঙ্গে আরও একটি ব্যাপার নজরে পড়েছিল তাঁদের। পাত্রের গায়ে একরকমের কালো কোটিং; যা এর আগে নজরে পড়েনি। পরবর্তীতে ভেল্লোর ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে পাত্রগুলিকে নিয়ে আরও গবেষণা করা হয়। তখনই বেরিয়ে পড়ে এই চাঞ্চল্যকর দিকটি। পাত্রের ওই কালো জায়গায় জমে আছে কার্বন ন্যানোটিউব। এর আগে, নবম শতকের একটি প্রত্নসামগ্রী থেকে এমন কার্বন ন্যানোটিউব পাওয়া গিয়েছিল। তামিলনাড়ুর ক্ষেত্রে সময়টা আরও পেছনে। ঐতিহাসিকদের হিসেবে, এখনও অবধি মানুষের তৈরি সবচেয়ে প্রাচীন ন্যানোপার্টিকলের হদিশ পাওয়া গেল কিলাডির প্রত্নক্ষেত্রে…
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ন্যানোটেকনোলজি ও ন্যানোপার্টিকল খুব একটা অপরিচিত নয়। বরং আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে গেছে এগুলো। কিন্তু আজ থেকে ২৬০০ বছর আগে, একটা সভ্যতায় কী করে এমন জিনিস তৈরি হয়? কী পদ্ধতিতে এই কার্বন ন্যানোটিউব তৈরি হল? বিশেষজ্ঞ মহল এবং ঐতিহাসিকরা দ্বন্দে। তবে তাঁরা মনে করছেন, যেহেতু এই ন্যানোটিউব তাপ এবং বিদ্যুতের সুপরিবাহী, তাই মাটির পাত্রকে তাড়াতাড়ি গরম করার জন্য এটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। ২৬০০ বছর আগে রাসায়নিক রংও পাওয়া যেত না। কয়লা, ভুষাকালি বা এই জাতীয় কার্বন-সংক্রান্ত জিনিস দিয়ে মাটির পাত্র রং করা হত যাতে তাপ ছড়িয়ে যায় তাড়াতাড়ি। হয়তো সেই কাজ করতে গিয়েই, একপ্রকার অজান্তে কার্বন ন্যানোটিউবের ব্যবহার করে ফেলেছেন তখনকার মানুষরা।
Powered by Froala Editor