মিশরের পিরামিড। পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়। সেই কবে থেকে মানুষরা জড়ো হচ্ছে এই বিশাল সমাধিসৌধের সামনে; কখনও ভেতরে নেমে খুঁজে নিচ্ছে প্রাচীন গুপ্তধন। উঠে আসছে একের পর এক মিশরীয় ফ্যারাওয়ের দেহ। কিন্তু পিরামিড দিয়েই কি মানুষের স্থাপত্যের ‘বিশাল’ নিদর্শনের ইতিহাস শুরু? তাই মনে করেন অনেকে। তবে অনেক ঐতিহাসিকের মতে - পিরামিড নয়; তারও বহু বছর আগে তৈরি হয়েছিল আরও কিছু স্থাপত্য। সেই ‘টাওয়ার’গুলিই হয়ত বিশ্বের বৃহৎ স্ট্রাকচারগুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরনো।
তর্ক-বিতর্ক তো অবশ্যই আছে। একবার ছোট্ট করে ঘটনায় ঢুকে পড়া যাক। পিরামিড বলতে মিশরের ‘দ্য গ্রেট’ গিজার পিরামিডের কথাই মাথায় আসে। একেই সবচেয়ে বড়ো ও পুরনো পিরামিড বলে মনে করা হয়। এটা নিয়েও দ্বৈরথ আছে। কারণ এই পিরামিডের ভাবনা ও গঠনটি শুধু মিশরে নয়, দক্ষিণ আমেরিকাতেও রয়েছে। সেখানেই (ভালোভাবে বললে, ব্রাজিল ও পেরু) রয়েছে আরও প্রাচীন কিছু পিরামিড, যাদের উচ্চতা প্রায় ১৭০ ফুট! এখান থেকে সরে এসে একটু নজর দেওয়া যাক তুরস্কের দিকে। কারণ, সেখানেই রয়েছে আমাদের কাঙ্খিত স্থাপত্য।
নাম, গোবেকলি টেপে। তুরস্কের প্রাচীন শহর উরফা’র থেকে ছয় মাইল দূরে অবস্থিত এই প্রত্নক্ষেত্র। এখনও খননকার্য চলছে যদিও; কিন্তু যেটুকু সামনে এসেছে তা রহস্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অনেকগুলো গোলাকার পাথরের স্ট্রাকচার ছড়িয়ে আছে, মাঝে মাঝে উঠে আছে থামের ধ্বংসাবশেষ। এখনও পর্যন্ত পাওয়া নানা নমুনা বিশ্লেষণ করে ঐতিহাসিকরা বলছেন, গোবেকলি টেপে অন্তত ১৩ হাজার বছরের প্রাচীন! হিসেব করে দেখলে, মিশরের পিরামিডের থেকেও আট হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল এই স্থাপত্য।
এখনও আশ্চর্যের শেষ হয়নি। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, এখনও পর্যন্ত গোটা স্থাপত্যের মাত্র পাঁচ শতাংশই আমাদের সামনে এসেছে! একটা বিরাট অংশ এখনও মাটির তলায়। পুরোটা সামনে এলে বিশ্ব ইতিহাসের নতুন একটি দিক খুলে যাবে। এখনও অবধি যা তথ্য সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী এই স্থাপত্য মূলত তুরস্কের প্রাচীন একটি মন্দির। মনে রাখতে হবে, আজ থেকে আনুমানিক ১৩ হাজার বছর আগে ধাতুর কোনো অস্ত্র বা সরঞ্জাম কিছুই আবিষ্কার হয়নি। সেই সময় তৈরি করা হয়েছে এই বিশাল স্থাপত্য। এমনকি, মিশরের গ্রেট পিরামিডও তখন অনেক দূরের জিনিস। একপ্রকার বলা যেতে পারে, গোবেকলি টেপে-ই পৃথিবীর প্রাচীনতম মেগালিথিক স্থাপত্য। শুধু তাই নয়, সব ঠিক থাকলে, বিশ্বের প্রাচীনতম মন্দিরের তকমাও পেতে পারে গোবেকলি টেপে। আপাতত, রহস্য ও ইতিহাসের মাঝখানে রয়েছে এটি। মাটির ভেতরে আরও কত আশ্চর্য মজুত রয়েছে, সেটাই ভেবে রাখছেন ঐতিহাসিকরা।
আরও পড়ুন
হ্রদের নিচে ১৬০০ বছরের প্রাচীন গির্জা, দূষণ কমায় দেখা যাচ্ছে খালি চোখেই
Powered by Froala Editor