২০১৪ সালের কথা। মাদুরাই শহরে যাচ্ছিলেন বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক। পথে খানিক বিশ্রামের জন্য তাঁরা থেমেছিলেন নিকটবর্তী কিলাড়ি গ্রামে। তখন কে-ই বা জানত, তাঁদের জন্য যে চমক অপেক্ষা করে রয়েছে বড়ো চমক। একটি স্থানীয় চায়ের দোকানে, এক ট্রাক চালকের সঙ্গে গল্প করতে গিয়েই আকর্ষণীয় এক তথ্যের সন্ধান পান তাঁরা। কিলাড়ি গ্রামের নারকেল বাগানে নাকি মাটি খুঁড়লেই হদিশ মেলে বিভিন্ন প্রাচীন পোড়ামাটির তৈরি সামগ্রী। তারপরই শুরু হয়েছিল প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান। এবার সেই অনুসন্ধানের নিরিখেই সামনে এল দক্ষিণ ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতার অস্তিত্ব।
কিলাড়ি এখন গবেষকদের কাছে প্রত্নতত্ত্বের ভাণ্ডার। সব মিলিয়ে প্রত্নক্ষেত্র হিসাবে ১১০ একর জমিকে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। যার মধ্যে মাত্র ৬ একর অঞ্চলে খননকার্য হয়েছে এখনও পর্যন্ত। আর তাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মাস দুয়েক আগেই এই অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল মাটির তৈরি বেশ কিছু পাত্র (Rice Bowl)। তাতে সংরক্ষিত ছিল প্রাচীনকালের দানাশস্যও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে কার্বন ডেটিং করতে পাঠানো হয়েছিল সেই শস্যের নমুনা। ফলাফল চমকে ওঠার মতোই। তার বয়স কমপক্ষে ৩১৫৫ বছর। অর্থাৎ, ১২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দেরও আগে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল দক্ষিণ ভারতে।
এই আবিষ্কারের পরই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্তালিন দাবি করেছিলেন তামিলনাড়ুর এই প্রাচীন জনপদই ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা। সত্যিই কি তাই? তা নিয়ে বেশ ধন্ধেই রয়েছেন গবেষকরা। আনুমানিক ৩০০০-২০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে জন্ম হয়েছিল সিন্ধু সভ্যতার। এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া নমুনা অনুযায়ী সিন্ধুর থেকে অনেকটাই বয়স কম দক্ষিণের এই প্রাচীন সভ্যতার। পরবর্তীকালে গবেষণায় নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হলেও এই সভ্যতা প্রাচীনতায় সিন্ধু সভ্যতাকে ছাপিয়ে যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন গবেষকরা।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে ভাষাগত একাধিক মিল রয়েছে দক্ষিণে। দেওয়াল চিত্র এবং অন্যান্য শিল্পকর্মের মধ্যেও নকশাগত সাদৃশ্য রয়েছে ৮০ শতাংশ। পাশাপাশি লিখিত সাহিত্যেও পিছিয়ে ছিল না তামিল সভ্যতা। ফলে, ক্ষীণ সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে, সিন্ধু সভ্যতার বাসিন্দারাই হয়তো এক সময় দক্ষিণে এসে তৈরি করেছিলেন নতুন জনপদ। বা, দুই সভ্যতার মধ্যে একটা দীর্ঘ সময় যোগাযোগ ছিল। কিন্তু তারপরেও কিন্তু গোটা ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে গেল তামিল সভ্যতাটি?
আরও পড়ুন
মিশরীয় সভ্যতারও ২০০০ বছর আগে মমি! কারা বানাতেন সেসব?
গবেষকদের অনুমান, পরবর্তীকালে সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল স্থলপথে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মধ্য ভারতের বিন্ধ পর্বতের অবস্থান বহিরাগত শক্তির থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল তামিল সভ্যতাকে। কুশান, গুপ্ত, মৌর্য এমনকি মোঘল সাম্রাজ্যের সময়েও দক্ষিণে পা পড়েনি বহিরাগত শক্তির। অন্যদিকে জলপথে দক্ষিণের সভ্যতা পৌঁছে গিয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। আঙ্করভাটের মন্দির যার অন্যতম উদাহরণ। এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলতে গেলে আরও প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। তবে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস যে বদলে যেতে পারে এই আবিষ্কারের ওপর ভর করে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…
আরও পড়ুন
সিন্ধু সভ্যতার ‘অনালোচিত’ শহর রাখিগড়িতে শুরু হচ্ছে খননকার্য
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৩২০০ বছরের পুরনো সভ্যতার হদিশ তামিলনাড়ুতে, ভারতীয় ইতিহাসের সূচনা দক্ষিণেই?