নিয়ান্ডারথালদের পারিবারিক ছবি প্রকাশ্যে, এই প্রথম!

কয়েক বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার একটি গুহায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল বেশ কিছু প্রাচীন মানুষের দেহাবশেষ। উল্লেখ্য, তারা ছিল নিয়ান্ডারথাল গোত্রের মানুষ। তাদের ডিএনএ-র নমুনা সংগ্রহ করে, জিনোম সিকোয়েন্স তৈরি করেছিলেন গবেষকরা। এবার সেই ডিএনএ সিকোয়েন্সের সৌজন্যেই প্রথমবার বিস্তারিত তথ্য মিলল নিয়ান্ডারথালদের (Neanderthals) পারিবারিক কাঠামোর (Family Structure)। 

বুধবার ‘নেচার’ বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি। গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। তাঁদের মতে, সাইবেরিয়ার চাগিরস্কায়া এবং ওগলাদনিকভ গুহায় বসবাসকারী এই পরিবারের বয়স অন্ততপক্ষে ৫৪ হাজার বছর। আজ থেকে ৪ লক্ষ বছর আগে প্রথম পৃথিবীর বুকে পা রাখে নিয়ান্ডারথালরা এবং ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবীর থেকে অস্তিত্ব মুছে যায় তাদের। অর্থাৎ, সময়ের নিরিখে দেখতে গেলে, বিবর্তনের প্রায় শেষ ধাপেই পৌঁছে গিয়েছিল সদ্য-আবিষ্কৃত নিয়ান্ডারথাল পরিবারটি। 

সবমিলিয়ে একটি গুহা থেকে ১৩ জন নিয়ান্ডারথালের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। যার মধ্যে ৭ জন পুরুষ, ৬ জন মহিলা। আশ্চর্যের বিষয় হল, কয়েক দশক আগেও যেমন যৌথ পরিবার দেখা যেত বাংলায়, ঠিক সেভাবেই বসবাস করত প্রাচীন নিয়ান্ডারথালরা। ১৩ জনের এই পরিবারে এক ব্যক্তি, তার স্ত্রী ও কিশোরী কন্যাকে শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেইসঙ্গে পাওয়া গেছে ওই ব্যক্তির মাতৃস্থানীয় এক মহিলা এবং খুড়তুতো ভাই ও তার পরিবারের উপস্থিতির প্রমাণও। 

সংশ্লিষ্ট গবেষণা বলছে, অনেকটা আজকের দিনের মতোই জীবনসঙ্গী খুঁজে পেলে ‘বাড়ি’ ছাড়ত সে-সময়ের মহিলারা। পারিবারিক গোষ্ঠী ছেড়ে জীবনসঙ্গীর হাত ধরে আশ্রয় নিত অন্য কোনো গুহায়। আর সেই কারণেই জিনোম সিকোয়েন্সে কয়েক প্রজন্মের পুরুষদের মধ্যে ওয়াই-ক্রোমোজমের চরিত্রের যথেষ্ট মিল রয়েছে। অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে এক্স ক্রোমোজোমের চরিত্র তুলনামূলকভাবে বেশি বৈচিত্রপূর্ণ।

বছর কয়েক আগেই, নিয়ান্ডারথালদের সম্পর্কে আরও একটি আকর্ষণীয় তথ্য প্রকাশ্যে এনেছিলেন গবেষকরা। জানিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর প্রিয়জনকে সমাধিস্থ করা কিংবা তার মৃতদেহকে অলঙ্কৃত করার মতো প্রথায় অভ্যস্ত ছিল প্রাচীন মানব। এবার প্রথমবারের জন্য সামনে এল তাদের পরিবারিক জীবনের ছবি। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই ডেনিসোভানদের জিনোম সিকোয়েন্স তৈরির জন্য নোবেল পেয়েছিলেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটেরই গবেষক ডঃ সান্তে। এবার অতীত অনুসন্ধানে তাঁর লড়াইয়ের পথ আরও প্রশস্ত করলেন তাঁর সতীর্থরা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More