হ্রদের জল কখনও এত স্বচ্ছ ছিল না। যদি থাকত তাহলে হয়তো প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনেকটাই পরিশ্রমই করতে হত না। মানুষ আগেই দেখতে পেত, তুর্কি দেশের ইজনিক হ্রদের নিচে আছে এক অতি প্রাচীন স্থাপত্যের নমুনা। তখন অবশ্য মানুষ এতটা অবাক হত কি? পরিচিত জিনিস হয়তো ততটা অবাক করে না। কিন্তু প্রায় ১৬০০ বছর পর মানুষ চর্মচক্ষে এই স্থাপত্য দেখে যথেষ্টই অবাক হয়েছেন। ইজনিক হ্রদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তোলা ছবি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে।
বর্তমান ছবিতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, হ্রদের জলের নিচে প্রাচীন গির্জার ধ্বংসস্তূপের উপর জন্মেছে সবুজ শ্যাওলা। তবে এখন তার পরিমাণ অনেকটাই কম। দীর্ঘ লকডাউনের জেরে কমেছে দূষণ, আর তার ফলেই পরিষ্কার হয়েছে ইজনিক হ্রদের জলস্তর। ফলে প্রায় ১০ ফুট গভীরে থাকা ধ্বংসস্তূপ দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট।
এই প্রাচীন গির্জাটির অস্তিত্ব অবশ্য আবিষ্কার হয়েছে আগেই। ২০১৪ সালে একদল মার্কিন প্রত্নতাত্ত্বিক জলের নিচে এই স্থাপত্যের নমুনা খুঁজে পান। পরবর্তী গবেষণায় জানা যায়, আনুমানিক ৩৯০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তৈরি হয়েছিল এই রোমান স্থাপত্যটি। যখন ইস্তাম্বুল পরিচিত ছিল কনস্ট্যান্টিনোপল নামে। আর এই গির্জার নাম ছিল ব্যাসিলিকা। অবশেষে ৭৪০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নেমে আসে বিপর্যয়। ভূমিকম্পের কবলে পড়ে এই স্থাপত্যটি। এবং শেষ পর্যন্ত হ্রদের গভীরে তলিয়ে যায় ব্যাসিলিকা।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা এরপর হ্রদের গভীরে নেমে অনেক নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এই তুর্কি অঞ্চলটিকে আন্তঃসলিলা প্রত্নক্ষেত্র হিসাবে ঘোষণা করার কথাও ভাবা হয়েছে। কিন্তু এমন চমকপ্রদ ছবির সাক্ষী থাকেননি কেউই। বর্তমান ছবি দেখে তাই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন উলুদাগ ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মুস্তাফা শাহীন। ৫ বছর ধরে ইজনিক হ্রদের গভীরে নমুনা সংগ্রহের কাজ করে আসছেন তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা। লকডাউনের ফলে সেই পরিচিত জায়গার এমন অসাধারণ ছবি দেখে তাই যুগপদ বিস্মিত ও আনন্দিত তিনি। সেইসঙ্গে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ধ্বংসস্তূপ সাধারণ মানুষের কাছে আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলেও আশাবাদী তিনি।
আরও পড়ুন
প্রতিবাদের আগুন ছড়াল ব্রিটেনে, ভাঙা হল দাস ব্যবসায়ীর মূর্তি, রেহাই নেই ‘রেসিস্ট’ চার্চিলেরও
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
২০৫ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কলকাতার সেন্ট অ্যান্ড্রু'জ চার্চের অংশ