কারোর কথা বলতে অসুবিধা। কেউ বা হাঁটতে পারেন না। কাউকে আবার তাঁর চারপাশের মানুষরা ‘পাগলের’ তকমা দিয়েছে। জানুয়ারির শেষ দিন থেকে এরা সবাই মেতে ওঠেন অন্যরকম আনন্দে। একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে মেলায় ঘোরাঘুরি করেন তাঁরা। আনন্দ হবে নাই বা কেন? তাঁরা যে সবাই আনন্দ নিকেতনের বাসিন্দা!
কাটোয়ায় রাজ্য সড়কের কাছেই খাজুরডিহি গ্রামে অবস্থিত এই আনন্দ নিকেতন। প্রতিবারের মতো এই বছরেও ৩১ জানুয়ারি থেকে সেখানে শুরু হয়েছে একটি বিশেষ মেলা। অংশ নেন প্রতিষ্ঠানের মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষেরা। ১৩ বছর ধরে আনন্দ নিকেতনের মাঠেই এই মেলার আয়োজন করে আসছেন কাটোয়ার প্রাক্তন বিধায়ক ও সমাজকর্মী হরমোহন সিংহ। এখানের অনেক কিছুর সঙ্গেই তিনি জড়িয়ে আছেন প্রবলভাবে। তিনবার পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। আনন্দ নিকেতনের পথ চলা শুরু ওঁর হাত ধরেই।
কাটোয়ার অন্যান্য অঞ্চলে শীতে মেলার আসর বসে। কিন্তু আবাসনের বিশেষভাবে সক্ষম মানুষরা সেখানে যেতে পারেন না। তাঁদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই আবাসনে রাখা হয়। কিন্তু সবারই তো অধিকার আছে আনন্দ উপভোগ করার। সেই ভাবনা থেকেই প্রতিষ্ঠানের মাঠেই মেলা বসে। ধীরে ধীরে আশেপাশের গ্রামগুলির মানুষও এখানে যোগ দেয়। মেলার পরিধিও আজ অনেক বেড়েছে। সবথেকে বড় কথা, আনন্দ নিকেতনের আবাসিকরা আজ সত্যিই আনন্দিত। ছয় দিন ব্যাপী এই মেলার জন্য বছরভর অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা। নিজেরাই আয়োজন করে গান, নাচ, আবৃত্তির। সব মিলিয়ে, কাটোয়ার আনন্দ নিকেতনের এই মেলা সত্যিই সব পেয়েছির দেশ!