১৮৮৯ সাল পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরে আইন-আদালত ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হত ফার্সি। পরবর্তীতে হিন্দি, ইংরাজি, আরবি এবং উর্দুর প্রচলন বাড়ে কাশ্মীরে। প্রায় ১৩০ বছর পেরিয়ে কাশ্মীরের (Kashmir) সেই ঐতিহ্যবাহী ফার্সিই (Persian Language) আজ বিপন্নপ্রায়। এবার প্রাচীন এই ভাষার সংরক্ষণ এবং তাকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতেই বিশেষ উদ্যোগ নিল কাশ্মীর প্রশাসন। শ্রীনগরে আয়োজিত হল কাশ্মীরী ফার্সি কবি এবং পণ্ডিত খাজা মুহম্মদ আমিন দারবের (Khwaja Muhammad Amin Darab) উপর বিশেষ প্রদর্শনী।
১৮৯০ সালে শ্রীনগরে জন্ম মহম্মদ আমিন দারবের। ফার্সি ভাষায় শুধু শের বা গ্রন্থ রচনাই নয়, অন্যান্য ভাষার গ্রন্থ অনুবাদ, শিক্ষকতা, ভাষা-বিবর্তনের অধ্যয়ন— এক-কথায় কাশ্মীরের এই ঐতিহ্যবাহী ভাষাটির সংরক্ষণে পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। তাছাড়াও তিনি বিখ্যাত ফার্সি ক্যালিগ্রাফির জন্যেও। তাঁকে আধুনিক ফার্সি ক্যালিগ্রাফির জনক বললেও ভুল হয় না এতটুকু। ১৯৭৯ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত, ফার্সি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে নিরন্তর পরিশ্রম করে গেছেন দারব।
ফার্সি ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে তাই এহেন ব্যক্তিত্বের সৃষ্টিশীলতাকেই হাতিয়ার করে নিয়েছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ। কাশ্মীরী সাহিত্য সংগঠন ‘দ্রাবুস’-এর সঙ্গে যৌথভাবে হাত মিলিয়েই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন তাঁরা। গত সোমবার থেকেই শ্রীনগরের অমর সিং ক্লাবে শুরু হয়েছে এই সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী। রয়েছে দারবের ১১টি গ্রন্থ-সহ ৭৩টি প্রাচীন দুর্লভ পাণ্ডুলিপি। যার মধ্যে রয়েছে, ১৯২৩ সালে রাজা হরি সিংহের সিংহাসন লাভের পর শ্রীনগরের ব্যবসায়ীদের পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তা, একাধিক বিবাহের কার্ড, নীল আর্মস্ট্রং-এর চন্দ্র-অবতরণের আনুষ্ঠানিক বিবৃতির ফার্সি অনুবাদ, নামাজের সালাহের অনুবাদ, একগুচ্ছ সুফি সঙ্গীতের স্বরলিপি ও কথার পাণ্ডুলিপি-সহ বিরল নথিপত্র।
সঠিকভাবে বলতে গেলে জয়নুল আবেদন-এর সময়েই কাশ্মীরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল ফার্সি ভাষা। সংস্কৃত ও ভারতের অন্যান্য ভাষার গ্রন্থ যাতে ফার্সিতে অনূদিত হয়, সেই ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনিই। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ থিতিয়ে পড়ে সেই ঐতিহ্য। বিশেষত ব্রিটিশ শাসনাধীন সময়ে, রীতিমতো সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল এই প্রাচীন ভাষা। সে-সময় এও ঐতিহ্য সংরক্ষণের হাল ধরেছিলেন দারব। এবার আরও একবার কাশ্মীরে ফার্সির ‘মসীহা’ হয়ে উঠলেন ‘কিতাব-ই-তারিখ’-এর স্রষ্টা…
Powered by Froala Editor