পৃথিবীতে অজানা রোগের সংক্রমণ আটকাতে বারবার ভরসা জুগিয়েছে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এমন মানুষদের সম্পূর্ণ দূরে রাখা হয় স্বাভাবিক জনজীবন থেকে। কিন্তু পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেমন থাকেন তাঁরা? সেই মানবিক দিকটির কথা কি আমরা আদৌ ভেবে দেখি? সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠা একটি ছবি সেই অল্প আলোচিত দিকটির উপরেই আলো ফেলেছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্লেক্সিগ্লাসের একদিকে এক বৃদ্ধা আর তার অপর দিকে তাঁর ছেলে। দুজনের মাঝে কাচের ব্যবধান থাকলেও দুজন হাত রেখেছেন একে অপরের উপর। এভাবেই যেন স্নেহের সন্তানের স্পর্শ পেতে চাইছেন বৃদ্ধা। এই দুঃসময়ে এই স্পর্শটুকুই তো বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষদের অপরাধ নেই কিছুই। তাঁদের অজান্তেই ভাইরাস বাসা বেঁধেছে শরীরে। অথচ সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের যেমন সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জেলখানায় থাকতে হয়, তাঁদের অবস্থাটাও যেন ঠিক তেমনই। তাই এই ব্যবস্থার অভিঘাত, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ মানুষদের মধ্যে, যথেষ্ট প্রভাব ফেলে বলে মত মনোবিদদের। আর বেলজিয়ামের এই দৃশ্যটি সেই কথাই প্রমাণ করে।
৮৮ বছরের বৃদ্ধা সুজান ভ্যালেট। অন্য অনেক মানুষের মতোই করোনা ভাইরাস বাসা বেঁধেছে তাঁর শরীরে। আর তাই তাঁকে পাঠানো হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। গত ২৯ এপ্রিল থেকে বেলজিয়ামের গ্রেস হলো পুরসভার একটি রিটায়ারমেন্ট সেন্টারে আছেন সুজান। এর মধ্যেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান তাঁর পুত্র ফিলিপ মেলার্ড। তখনই তাঁদের কথাবার্তার মাঝে ধরা পড়ে এই দৃশ্য। ফেসবুকে ভয়েস অফ আমেরিকার একটি পোস্টে ব্যবহার করা হয় ছবিটি। আর তার পরেই দেখতে দেখতে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এই ছবি।
এখনও অবধি বেলজিয়াম শহরে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। তাঁদের অনেকেই আছেন কোয়ারেন্টাইনে। আর গোটা পৃথিবীতে সংখ্যাটা প্রায় ৩৫ লক্ষ। অথচ এখনও অবধি ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা উপযুক্ত চিকিৎসা কোনোটাই সঠিকভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ছে বহু মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যও। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই গণমনস্তত্ত্বের এক জটিল দিক ফুটে উঠছে। এই অন্ধকার সময়ের শেষ কোথায়, কেই জানি না। তবু এর মধ্যেই এগিয়ে যেতে হবে। এভাবেই হয়তো কাঁচের দুই প্রান্ত থেকে হাত মেলাবে সমস্ত মানুষ।