দিনটা ছিল ১৩ এপ্রিল। ১৯১৯ সাল পৃথিবী সাক্ষী থেকেছিল ভারতের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যার। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের বদ্ধ প্রাঙ্গণে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিয়ে মারা গিয়েছিলেন কয়েকশো আন্দোলনকারী। সেই ঘটনায় আগুন জ্বলে উঠেছিল সারা দেশে। নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথও। তবে সেদিনের শহীদরা যোগ্য মর্যাদা পাননি এতদিন। জালিয়ান ওয়ালাবাগ গণহত্যার ১০১ বছর পেরিয়ে এসে এবার প্রকাশিত হল সেই শহীদদের নামের তালিকা।
সম্প্রতি অমৃতসর প্রশাসন তাঁদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন এই তালিকা। তাতে নাম রয়েছে ৪৯২ জন শহীদের। তবে এই তালিকার সত্যতা নিয়ে এখনও রয়ে গেছে বিতর্কের জায়গা। মূলত এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের তৈরি আহত এবং মৃতদের তালিকা থেকে। যা পরবর্তীকালে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে তৈরি করেছিলেন শাসকরা। ফলে এই তালিকায় অনেকেরই নাম ইচ্ছাকৃতভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছিল সেই সময়, থেকেই যাচ্ছে সেই সম্ভাবনা।
বিতর্ক এড়াতে অমৃতসর প্রশাসন শহীদদের আত্মীয়-স্বজনদের জমা দিতে অনুরোধ করেছেন উপযুক্ত নথি। তার ওপর ভিত্তি করেই নতুন করে শহীদদের শনাক্ত করে নাম সংযোজন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত এই ধরণের ১১ জন উত্তরসূরি প্রাসঙ্গিক নথি জমা দিয়েছেন বলেই জানাচ্ছে অমৃতসরের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। আগামী ২২ জানুয়ারি নথি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হিসাবে নির্ধারিত করেছে পাঞ্জাব সরকার।
আগামী ২৫ জানুয়ারি রঞ্জিত অ্যাভিনিউয়ের আনন্দ পার্কে শহীদদের আত্মীয়স্বজনদের সম্মান জানিয়ে রাজ্য পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠান করার কথাও ঘোষণা করেছে অমৃতসর প্রশাসন। উপস্থিত থাকবেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং সমস্ত বিধায়ক ও পৌরপ্রধানরা। সেখানে একটি পৃথক স্মৃতিসৌধও উন্মোচন করা হবে। সেখানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে খোদাই করা হবে তাঁদের নামও।
জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ভারতের ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়। যা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল নিরপরাধ মানুষদের। বাগানের ইটের দেওয়ালে আজও বুলেটের ক্ষতচিহ্ন বহন করে চলেছে সেই বর্বরতার স্মৃতিচিহ্ন। সেদিনের শহীদরা যোগ্য বিচারটুকুও পাননি। ঘটনার একশো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এখনও ক্ষমাপ্রার্থনা করতে রাজি হয়নি ব্রিটেন। তবে শহীদদের জন্য বিশেষ সৌধ নির্মাণ— খানিকটা হলেও সমর্থ হল তাঁদের সম্মানজ্ঞাপন করতে...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শহিদ হওয়ার আগেই ইংরেজ জেলাশাসককে হত্যা, রক্তাক্ত মেদিনীপুরের ফুটবল মাঠ