স্থলভাগের ক্রমশ এগিয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আমফান। দিঘা থেকে প্রায় ৩৯০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রেই গর্জন করছে এই অতিঘুর্ণি। উড়িষ্যার পারাদ্বীপ থেকে তার দূরত্ব ২৭৫ কিলোমিটার। এখন তার হাওয়ার ঝাপটার সর্বোচ্চ গতিবেগ খানিকটা হলেও কমে দাঁড়িয়েছে ২৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এই গতিবেগ কমার নিরিখে ‘সুপার সাইক্লোন’ থেকে ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন’-এর পর্যায়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে আমফানকে।
তবে স্থলভূমিতে আঘাত হানার সময় আরো খানিকটা শক্তিক্ষয় করবে আমফান। তখন গতিবেগ কমে হতে পারে ঘণ্টায় ১৬০-১৭০ কিলোমিটারের মতো। তবে ক্রমশ বাতাসের প্রবাহের সঙ্গে সমুদ্রস্রোত-ও পরিবর্তিত হচ্ছে। ক্রমাগত সমুদ্রের জলরাশিকে সমুদ্রতটের দিকে ঠেলে নিয়ে আসছে আমফান। ফলে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় বিপুল জলোচ্ছ্বাসে বিপর্যস্ত হতে পারে নিচু অঞ্চলগুলি। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা হতে পারে ৪-৫ মিটার পর্যন্ত।
আমফানের মোকাবিলায় প্রস্তুত প্রতিরক্ষা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দিঘা, কাঁথি উপকূলে টহল দিচ্ছেন পুলিশ এবং নুলিয়ারা। সুন্দরবন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে এক কোম্পানি বিএসএফ ব্যাটেলিয়নকে। ভয়ঙ্কর এই অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হানার আগেই জরুরি তৎপরতায় সারিয়ে তোলা হচ্ছে বেশ কিছু অঞ্চলের বাঁধ।
আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং মেদিনীপুরে ধ্বংসলীলা চালাবে আমফান। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে সাগরদ্বীপ। এই দুই জেলার পরে বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে কলকাতাকে। যদিও কলকাতায় পৌঁছে ঝড়ের গতিবেগ থাকবে প্রতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটারের কাছাকাছি, তাও সমস্তরকম সতর্কতাই নিচ্ছে প্রশাসন। ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে হাওড়া, হুগলিতেও।
ইতিমধ্যেই আমফানের প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে উড়িষ্যার বেশ কিছু অংশে। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও সন্ধে থেকেই নানান অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। উপকূলের নিকটবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টির প্রাবল্য বাড়বে কাল থেকেই। সঙ্গে নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদাতে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি এবং গাছ উপড়ে বিপর্যস্ত হতে পারে রাজ্যের সড়কপথগুলি। আমফানের দাপট তীব্র হওয়ার আগেই উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে জাহাজগুলিকে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২১ তারিখ পর্যন্ত সমুদ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে মৎস্যজীবীদেরও। সব মিলিয়ে আমফান যে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে রাজ্যে, তারই আভাস দিচ্ছে মৌসম ভবন।