বাবা সুরেশ ক্ষেত্রী বিএসএফ-এর জওয়ান। শক্তিশালী শরীর আর নিয়মিত ব্যায়াম করা তাঁর অভ্যাস। কিন্তু তাঁর ছোটছেলে অমিত একেবারে অন্যরকম। ব্যায়ামের কথা বললেই তার গায়ে জ্বর আসে। এমনিতে সুরেশও বাড়ির বাইরেই থাকেন। শুধু ছুটির সময় বাড়িতে ফিরলেই শুরু হয় বাবা আর ছেলের মধ্যে লাগে ঝামেলা। প্রায়ই বকাবকি করেন সুরেশ। তিনি চান, ছেলেরাও তাঁর মতো সেনাবাহিনীতে যোগ দিক। আর তার জন্য শারীরিকভাবে সুস্থ সবল থাকা আবশ্যক। তবে অমিতের সাম্প্রতিক কৃতিত্বের পর স্তম্ভিত সবাই। তাকে আর কিছু বলার নেই বলেই মনে করছেন সুরেশ। নাইরুবি শহরে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব ২০ রেস ওয়াক ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জয় করল অমিত। আর এটাই তার জীবনে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা।
অনুর্ধ্ব ২০ রেসওয়াক ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে প্রথম পদক জয় করল অমিত ক্ষেত্রী। প্রতিযোগিতার প্রথম থেকেই সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল অমিত। কিন্তু ১০ কিলোমিটারের যাত্রাপথে একটু ভুল হলেই পিছিয়ে পড়তে হয়। শেষ মুহূর্তে তেমনই অঘটন ঘটল অমিতের সঙ্গে। তৃষ্ণা মেটাতে জল খুঁজতে গিয়েই পিছিয়ে পড়ল সে। আর এই সুযোগে এগিয়ে গেল কেনিয়ার হ্যারিস্টন ওয়ান্যোনি। তবে অমিতের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ অবাক করেছে সকলকে। ৪২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের চেয়েও কম সময়ে ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে সে। অবশ্য এর জন্য অনুশীলনও তাকে কম করতে হয়নি। চলতি বছরের শুরুতেই নৈনিতালের ঠান্ডায় একটানা ৩ মাস ধরে চলেছে অনুশীলন। নাইরুবি শহরের পরিবেশের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে হবে যে। আসলে আবহাওয়ার পার্থক্যের জন্যই তো বারবার ব্যর্থ হয়েছেন ভারতীয় প্রতিযোগীরা। শুধু রেসওয়াকের প্রথম পদকই নয়, অনুর্ধ্ব ২০ ওয়ার্ল্ডচ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী ভারতীয় অ্যাথলিটের সংখ্যা খুব বেশি নয়। অমিত সেখানে তৃতীয়জন।
অমিত ক্ষেত্রীর এই সাফল্যে পিছনে অবশ্য কোচ চন্দন সিং-কেই সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে চায় অমিতের পরিবার। পুণে নিবাসী চন্দন নিজেও এখনও নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তবে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদকজয়ের সাফল্য তাঁর হয়নি। অমিতের ভিতর দিয়ে সেই স্বপ্নকেই বাস্তব করে তুলতে চেয়েছিলেন চন্দন। আর তা পূরণও হয়েছে। যদিও চন্দন মনে করেন, সোনা জেতার সম্পূর্ণ যোগ্যতাই ছিল অমিতের। শেষ মুহূর্তের ভুলটুকু না করলে তাকে কেউই টপকাতে পারত না। তবে জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এটুকু ভুল তো হতেই পারে। অমিতের আলস্য নিয়েও আর বিরক্ত নন সুরেশ ক্ষেত্রী। হরিয়ানার রোহতাক জেলার প্রত্যন্ত গ্রামটিতে এখন শুধুই খুশির মেজাজ। পুণে শহরে বসে সেই আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন চন্দনও। কিন্তু এই সাফল্যকে আগামীতেও ধরে রাখতে হবে। চন্দন আর অমিতের কাছে আপাতত সেটাই সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অলিম্পিকের আগেই কুস্তির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৮টি সোনা ভারতের