মাত্র আট বছর বয়স ছিল ছেলেটির। ফুটফুটে, ফরসা ছেলেটি হাসত, পড়ত। সবথেকে ভালবাসত খেলতে। ক্রিকেট ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু, আট বছরেই ছেলেটির জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় দুটো হাতই চলে যায়। এতদিন যা যা করত, সব গেল তাঁর। গেল ক্রিকেটও…
না, যায়নি। ছেলেটাই যেতে দিল না। নিজের আকস্মিক দুর্বলতাকে এক ঝটকায় হারিয়ে আবার সে ফিরে এল ক্রিকেটের জগতে। হাত নেই তো কি হয়েছে, বেঁচে তো আছে সে! শরীরের বাকি অংশ তো ঠিক আছে। ব্যাস, এখান থেকেই শুরু হয় একটা রূপকথার। এই রূপকথা জম্মু কাশ্মীরের আমির হুসেন লোনের।
সালটা ১৯৯৭। কাশ্মীরের বিজবেহারার আট বছরের আমিরের জীবনে ঘটে যায় চরম দুর্ঘটনা। কারখানায় করাতের কোপে বেকায়দায় চলে যায় তাঁর দুটো হাত। যখন জ্ঞান হয়, ততক্ষণে সব শেষ। না, প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল ছোট্ট আমির। কিন্তু চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলে হাত। শুধু দৈনন্দিন কাজকর্ম না, বাধা পড়ে খেলাতেও। ছোট থেকেই ক্রিকেটের ভক্ত আমির। কিন্তু এবার? এবার কী হবে?
শরীরের সামর্থ্য কমে গেলেও, মনের জোর কমেনি তাঁর। হ্যাঁ, কয়েকদিন দিশাহারা হয়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাড়াতাড়ি সে মাঠে নেমে পড়ে। কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করে। সেই সঙ্গে চালিয়ে যেতে থাকে তার খেলা। কীভাবে স্টান্স নেবে, ব্যাট ধরবে কেমন করে, বল ও ফিল্ডিংই বা করবে কেমন করে— সমস্ত কিছু নিয়ে চলে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা। শেষে বেছে নেয় উপায়। নিজের ডান পা দিয়ে বল করা শুরু করল আমির। মুখ আর ঘাড়ের সাহায্যে ব্যাট ধরল। সাফল্যও পেল।
তবে বাধাও কি আসেনি? পাড়া প্রতিবেশী থেকে স্কুলের শিক্ষক— সবার থেকে একটাই কথা শুনত আমির। ‘তোমার আর হবে না’। আর এটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল সে। পরবর্তীতে, ২০১৬ সালে সে জম্মু-কাশ্মীরের প্যারা ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে নির্বাচিত হয়। তখন, তার বয়স ২৬। কিন্তু তার আগের ১৮ বছর যে লড়াই চলেছে, সেটা ভোলেনি আমির হুসেন লোন। লড়াই কি আজও থেমেছে?