দেখতে দেখতে কেটে গেল ১৩৩ বছর। আজও জনপ্রিয়তার একেবারে শীর্ষে শার্লক হোমস। গোয়েন্দা বললেই যেন এই একটি নামই মাথায় আসে। উনিশ শতকের প্রেক্ষাপট থেকে শার্লক এসে পৌঁছেছেন একেবারে একুশ শতকে। বেশভূষা বদলেছে। কাহিনিতে মোচড় এসেছে। কিন্তু শার্লকের আপাত অনুভূতিহীন রুক্ষ ও যুক্তিবাদী চরিত্র আজও একইভাবে পাঠককে ধরে রাখে। শুধু পাঠক কেন? সিনেমা, টিভি সিরিজ বা ওয়েব সিরিজের দর্শকরাও একইভাবে মুগ্ধ হন বুদ্ধির জাদুতে। আর সেই শার্লকের কাহিনি রচনায় স্বয়ং স্রষ্টাকেই পিছনে ফেলে যাবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন মার্কিন লেখিকা লরি কিং।
অবাক হচ্ছেন? স্বয়ং শার্লকের কাহিনি লেখায় আর্থার কোনান ডয়েলকে পিছনে ফেলে যাওয়া সত্যিই এক অভিনব চ্যালেঞ্জ। শোনা যায় ডয়েল নিজেও নাকি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন শার্লকের কাহিনি লিখতে লিখতে। সেই ১৮৮৭ সালে ‘আ স্টাডি ইন স্কারলেট’ থেকে শার্লক-ওয়াটসনের যাত্রা শুরু। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি স্যার আর্থার কোনান ডয়েলকে। ১৮৯৩ সালে প্রায় বিরক্ত হয়ে তিনি লিখে ফেললেন ‘দ্য ফাইনাল প্রবলেম’। জেমস মরিয়ার্টির কাছে হারিয়ে দিলেন শার্লককে। মৃত্যু হল গোয়েন্দার। কিন্তু পাঠক কি এত সহজে মেনে নেবে? আবারও শার্লককে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হলেন ডয়েল।
সারা জীবনে শার্লক হোমসকে নিয়ে ৫৬টি গল্প এবং ৪টি উপন্যাস লিখেছেন স্যার ডয়েল। আর তারপর? গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বলছে, সাহিত্য-চলচ্চিত্রে যে মানব চরিত্র সবচেয়ে বেশিবার এসেছে, তার নাম শার্লক হোমস। আর অতিমানবিক চরিত্রের মধ্যে একমাত্র ড্রাকুলাই শার্লককে পিছনে ফেলতে পারে। উনিশ শতকের শার্লক হোমসকে একুশ শতকের বাস্তবতায় ফুটিয়ে তুলেছেন বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ। এমনকি রাশিয়ার টিভি সিরিজে মহিলা শার্লককেও দেখা গিয়েছে। বিবিসির কাহিনি দুটি সিরিজে শেষ হয়ে গেলেও এলোনা হোমস সিরিজ নিয়ে হাজির হল নেটফ্লিক্স। অবশ্য শার্লককে নিয়ে এমন নানা ধরণের পরীক্ষা নীরিক্ষায় সকলেই যে সন্তুষ্ট, তা নয়।
শার্লক হোমসের কিছু অনুপ্রেরণা নিয়ে ক্ষুব্ধ কোনান ডয়েল এস্টেট কর্তৃপক্ষও। লেখকের প্রপৌত্র রিচার্ড পুলের কথায়, একুশ শতকে শার্লককে হাজির করা বা তাঁকে মহিলা হিসাবে দেখানোয় আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সমস্যা হল, অনেক ক্ষেত্রেই শার্লকের চরিত্রটাই আমূল বদলে ফেলা হয়। ঠিক যেমন নেটফ্লিক্সের সিরিজে শার্লকের নরম মানসিকতা নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনি। তাঁর মতে, শার্লককে অনুভূতিহীন যুক্তিবাদী চরিত্র হিসাবেই গড়ে তুলেছিলেন ডয়েল। সেখানে পরিবর্তন মেনে নেওয়া যায় না। তবে শার্লকের বেশিরভাগ লেখারই তো কোনো কপিরাইট নেই। শেষ কাহিনির কপিরাইটও শেষ হয়ে যাবে ২০২৩ সালে। ফলে সব মিলিয়ে আইনি পথে হাঁটার কোনো রাস্তা নেই।
তবে কোনান ডয়েল এস্টেটের পক্ষ থেকেই শার্লককে নিয়ে কাহিনি রচনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন লরি কিং। ইতিমধ্যে ২০টির বেশি কাহিনি লিখে ফেলেছেন তিনি। ৬০ অতিক্রম করা সত্যিই অসম্ভব নয় হয়তো। স্যার কোনান ডয়েল তাঁর গোয়েন্দাকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও সারা পৃথিবীর অসংখ্য ভক্তের ক্লান্তি আসতে এখনও ঢের বাকি।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ফেলুদার শহরে শার্লক হোমসের ঠেক; ঢুঁ মারতেন সুকুমার সেন, প্রেমেন্দ্র মিত্র, নীরেন্দ্রনাথ, সমরেশ বসুরা