সোভিয়েতকে পারমাণবিক বোমার তথ্য দিয়েছিলেন এই আমেরিকান বিজ্ঞানী

পারমাণবিক শক্তিধর দেশ বললে প্রথমেই যে দেশের কথা আমার-আপনার মনে পড়বে, তা হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। তারপর সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারপর আরো অন্যান্য কিছু দেশ। ১৯৪৯ সালের ২৯শে অগাস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রথম পারমাণবিক বোমা আরডিএস ১ এর পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়। আরডিএস ১-র সঙ্গে ১৯৪৫ সালের ৯ অগাস্ট জাপানের নাগাসাকি শহরে ফেলা ‘ফ্যাট ম্যান’ বোমার বহু সাদৃশ্য ধরা পড়ে। কিন্তু কমিটি অন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশানের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৩ সালের আগে সোভিয়েতের পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব নয়।

তবে কি পরমাণু বোমা বিষয়কর গোপন তথ্য সরবরাহ করেছেন কেউ? হ্যাঁ। এমন কাজ করেছেন খোদ আমেরিকারই বিজ্ঞানী থিওডোর হল। কিন্তু নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া হার্ভার্ড স্নাতক এই মেধাবী কী করে পরিণত হলেন গুপ্তচরে? উত্তর খুঁজতে ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে।

১৯২০ সালের ২০ অক্টোবর ব্যবসায়ী বাবা ও গৃহিণী মায়ের ঘরে জন্মান থিওডোর। মহামন্দর সময়ে বেড়ে ওঠা এই তরুণ বাস্তবকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। পরিস্থিতি তাঁর মেধা বিকাশের বাধা হতে পারেনি। ষোল বছর বয়সে জায়গা করে নেন হার্ভার্ডে। এমন নিপুণ মেধা মার্কিন কর্মকর্তাদেরও চোখ এড়ায়নি। কিন্তু যা এড়িয়েছিল তা হল, থিওডোর ছিলেন হার্ভার্ডের মার্ক্সিস্ট ছাত্র সংগঠনের সদস্য। হার্ভার্ডে পড়াকালীন তাঁর রুমমেট ছিলেন চরম কমিউনিস্ট স্যাভিল স্যাক্স। 

ম্যানহাটান প্রজেক্টের কঠোর গোপনীয়তা নীতি এড়িয়েও থিওডোর সোভিয়েতদের পারমাণবিক বোমা সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে এফ বি আই থিওডোর-কে জেরা করে। কিন্তু তাঁর ও স্যাভিল স্যাক্সের থেকে কোনো স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি। জিজ্ঞাসাবাদ করেও কিছু পায়নি এফ বি আই। ফলে দুজনেরই অন্যান্যদের মতো কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হয়নি। ম্যানহাটান প্রজেক্টের পর আর গুপ্তচরের কাজ করেননি থিওডোর। আইন তাকে ধরতে না পারলেও নিরাপত্তার কারণে সস্ত্রীক নিউইয়র্কে চলে আসেন তিনি।

  ১৯৯৬ সালে রাশিয়ানদের সঙ্গে তাঁর চুক্তির তারবার্তাগুলি জনসমক্ষে আসে। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে থিওডোর বলেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ইতিহাসের গতি বদলে দিয়েছেন। বলেছিলেন পারমাণবিক বোমা তৈরিতে আমেরিকার একচেটিয়া অধিকার সারা বিশ্বে মন্দা সৃষ্টি করতে পারে – এই নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। সেক্ষেত্রে সোভিয়েতের পারমাণবিক শক্তি একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।

  ইতিহাস ইতিহাসের মতন চললে হয়তো ৫০ বছর আগেই আণবিক যুদ্ধ হত। হিরোশিমা নাগাসাকির পর পৃথিবীর আর কোথাও পারমাণবিক হামলা হয়নি। সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে সেদিন থিওডোরের  সাহসী পদক্ষেপ আজকের পৃথিবী মনে রাখবে।

Latest News See More