পশু পাচার ও অনৈতিক পশু হত্যায় জর্জরিত গোটা পৃথিবীই। চোরাশিকারীদের দাপট বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। এতে প্রচ্ছন্ন সায় রয়েছে অনেক দেশের সরকারেরও। আর এর ফলে বিলুপ্তির মুখে চলে যাচ্ছে একাধিক প্রজাতির প্রাণী। এর বিরুদ্ধে বেশ কিছু বছর যাবৎ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন পশু সংস্থা। সম্প্রতি, বিশ্বজুড়ে চলা পশু পাচারের বিরুদ্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করছে ইউএস ফিস অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ সার্ভিস এবং ন্যাশানাল ওয়াইল্ড লাইফ প্রপার্টি রিপোসিটরি।
আমেরিকার কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভারের-লাগোয়া এক গুদামঘরে অদ্ভুত কিছু জিনিস জমিয়েছে এই সংস্থাটি। দেখলে তাক লেগে যেতেই পারে। গুদামঘরটি আয়তনে প্রায় ২২ হাজার বর্গফুটের। যেখানে রয়েছে বারো লক্ষের বেশি মৃত বাঘ, হাতির শুঁড়ের বাতি, কয়েক হাজার ভালুকের নখ। এছাড়াও রয়েছে চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন পণ্য, প্যাঙ্গোলিনের চামড়ার কাউবয় বুটজুতো ইত্যাদি।
এই সংগ্রহের ইতিহাসও নিতান্ত ছোট নয়। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে, সন্দেহ হলেই তাদের আটক করে মার্কিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপর এই যাবতীয় মৃত পশুপাখি নিয়ে আসে এখানে। বিরল গাছপালা এবং গাছ থেকে তৈরি পণ্যও রয়েছে এখানে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য অন্যরকম পদক্ষেপ এটি।
যে সমস্ত জিনিস এখানে রয়েছে, তা আসলে প্রত্যেকটি প্রজাতির চিহ্ন। সাধারণ দর্শকদের জন্য এই সংগ্রহশালার ছোটো একটি অংশ খোলা থাকে, যেখানে আগে থেকে অনুমতি নিলে তবেই প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়।
আগে সংস্থাটির ন্যাশনাল ফরেনসিক গবেষণাগারের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হত এই সংগ্রহশালা। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকেই বোঝা যায় এই সংগ্রহশালার নিজস্ব স্থান দরকার। তাই পরবর্তীকালে এই স্থান নির্ধারণ করা হয়। শিক্ষাগত এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য এই সংগ্রহশালার অবদান নিতান্ত কম নয়, এমনটাই মত বিজ্ঞানীদের।
মৃত প্রাণীদের দেহাংশ জমিয়ে তৈরি এমন সংগ্রহশালার কথা শুনে হয়তো অবাক হবেন অনেকে। অনেকে হয়তো শিউরে উঠবেন হত্যালীলার এত চিহ্ন দেখে। অনেকে হয়তো এই ‘মিউজিয়াম’ ভুলে থাকতে চাইবেন। কিন্তু এসব ব্যক্তিগত অনুভূতি কোনো কাজেই আসবে না, যতক্ষণ না আমরা সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলব প্রাণীহত্যার বিরুদ্ধে। এখন সময় কাজের। যেন এই সংগ্রহশালা আর পরিবর্ধিত না হয়, ‘মানুষ’ হিসেবে এটুকু চেষ্টা বরং করি আমরা…