ঘুম থেকে উঠেই বদলে গেল উচ্চারণ, কী এই ‘ফরেন অ্যাকসেন্ট সিনড্রোম’?

মাত্র ঘণ্টা সাতেকের ব্যাপার। ঘুমানোর আগেও স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছেন রোগী। অথচ, ঘুম থেকে ওঠার পরই, তাঁর মুখে এক অদ্ভুত ভাষা। না, কথা জড়িয়ে গিয়ে যে এমন অদ্ভুত শোনাচ্ছে— তেমনটা একেবারেই নয়। মাতৃভাষাই বলছেন তিনি, তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। ঠিক যেন বিদেশিদের উচ্চারণে।

হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে দেখা গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (US)। ‘বিএমজে কেস রিপোর্ট’ পত্রিকার জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে এই আশ্চর্য কাহিনির কথা। সেখানে জানানো হয়, ক্যানসারআক্রান্ত এক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই আশ্চর্য ঘটনা। রাতে ইংরাজিতে কথা বললেও, ঘুম থেকে উঠেই আইরিস ভাষায় কথা বলা শুরু করেন তিনি। এমনকি ইংরাজি বলার সময়ও, তাঁর কণ্ঠে স্পষ্ট শোনা যায় আইরিস টান, আইরিস অ্যাকসেন্ট। অথচ, অবাক করার বিষয় হল, জীবনে কখনও কোথাও আইরিস শেখেননি তিনি। কখনও পা-ও রাখেননি আয়ারল্যান্ডে। 

১৯৮২ সাল। স্নায়ুবিদ হ্যারি হুইটেকার এই বিশেষ অবস্থাটি চিহ্নিত করেন ‘ফরেন অ্যাকসেন্ট সিনড্রোম’ (Foreign Accent Syndrome) নামে। অবশ্য ১৯০৭ সালের বেশ কিছু নথিতেও লিখিত রয়েছে এই রোগের কথা। সেটাকেই প্রাচীনতম উল্লেখ হিসাবে ধরে নেন গবেষকরা। অবশ্য, তখন তা ‘ফরেন অ্যাকসেন্ট সিনড্রোম’ নামে পরিচিত ছিল না। কিন্তু এধরনের ঘটনার কারণ কী? 

এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে ১০০টি এধরনের ঘটনা ঘটেছে বিশ্বজুড়ে। আর তার মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে জিনিসটা সাধারণ, তা হল স্নায়ুতে আঘাত। বিশেষত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ঘটনার প্রভাব দেখা গিয়েছিল সবচেয়ে বেশি। মাথায় কিংবা শিরদাঁড়ায় বন্দুকের গুলি কিংবা বোমার শার্পনেলের আঘাতে লেগেছিল ‘ফরেন অ্যাকসেন্ট সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীদের। আর সেই কারণেই চিকিৎসকদের মতে এটি একটি স্নায়ুজনিত রোগ। 

আসলে, মানুষের স্নায়ুই নিয়ন্ত্রণ করে পেশির নড়াচড়াকে। স্নায়ু বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে কণ্ঠ-সংলগ্ন পেশির নড়াচড়া প্রভাবিত হলে, হঠাৎ করেই বদলে যায় মানুষের কথা বলার ভঙ্গি, উচ্চারণ। বিশেষত স্বরবর্ণের উচ্চারণ বদলে গেলে, উচ্চারিত কথা বিদেশি অ্যাকসেন্টের মতোই শোনায়। 

তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে কিছু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিকতম ঘটনাটিও পড়ে সেই তালিকাতেই। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩টি ঘটনার সন্ধান মিলেছে, যেখানে স্নায়ুতে সরাসরি বড়ো কোনো আঘাত না-পাওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন ফরেন অ্যাকসেন্ট সিনড্রোমে। সর্বপ্রথম এহেন ঘটনা লক্ষ করা গিয়েছিল পঞ্চাশের দশকে। চলতি শতকের শুরুর দিকেও নরওয়েতে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক ক্যানসার রোগী। এবার আবার পুনরাবৃত্তি হল সেই ঘটনার…

Powered by Froala Editor

More From Author See More