প্রয়াত যুক্তরাষ্ট্রের নারীবাদী কণ্ঠস্বর রুথ বেডার গিন্সবার্গ, শেষ হল আন্দোলনের একটি অধ্যায়

মেয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করবে, তাতে একদমই মত ছিল না বাবা-মায়ের। কেননা আইনজীবী একজন পুরুষের পেশা। তবুও এই অসম লড়াইতেই ঝাঁপিয়েছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় মহিলা বিচারপতি হয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন বৈষম্যের বিরুদ্ধেও আসে জয়। রুথ বেডার গিন্সবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের লিঙ্গবৈষম্য এবং নারীবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ ছুটি নিলেন শেষমেশ। শেষ হল আমেরিকার আধুনিক ইতিহাসের এক অধ্যায়।

বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে। চলছিল চিকিৎসা, কেমোথেরাপি। তবে লড়াইটা জারি রাখতে পারলেন না যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ এই বিচারক। গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে নিজের বাড়িতেই প্রয়াত হন তিনি। 

জন্ম ১৯৩৩ সালের ১০ আগস্ট, নিউ ইয়র্কে। তবে তাঁর বাবা ছিলেন রাশিয়ার ইহুদি শরণার্থী। আইন নিয়ে পড়বার কোনো পরিকল্পনা ছিল না রুথ বেডারের। বরং কলা বিভাগেই স্নাতক হন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে। স্নাতক স্তরে তৃতীয় বর্ষ চলাকালীন তিনি সিদ্ধান্ত নেন আইন নিয়ে পড়বার। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েতের রাজনৈতিক সম্পর্ক যথেষ্ট তলানিতে। সেই পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু আইনজীবী সরব হয়েছিলেন মৌলিক অধিকারের পক্ষে। যা একপ্রকার তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল আইনজীবী হওয়ার।

তবে বাস্তবের মাটিতে যে তাঁর বাবা-মায়ের ভবিষ্যদ্বাণীই অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে তার ধারণা ছিল না রুথ বেডারের। আইন পড়ার সময় প্রায় ৫০০ জনের মধ্যে মাত্র ৯ জন ছাত্রী ছিলেন তাঁর ক্লাসে। আইন নিয়ে পাশ করার পরে প্রথম হোঁচট খেতে হয় চাকরি খুঁজতে গিয়েই। ‘পুরুষ অধ্যুষিত’ ক্ষেত্রের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। বার বার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করেও ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। পরবর্তীকালে এক অধ্যাপকের সহায়তায় সামান্য এক কেরানির পদেই যোগ দিয়েছিলেন রুথ বেডার।

আরও পড়ুন
যুদ্ধের সমাপ্তি, প্রয়াত ভারতীয় সংস্কৃতির ‘রণনেত্রী’ কপিলা বাৎসায়ন

তবে তাঁর লড়াইটা থেমে যায়নি সেই ধাক্কাতেই। ১৯৬৩ সালে রুতগার্স ল’ স্কুলে অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন তিনি। কিন্তু বৈষম্যের ছায়া পিছু ছাড়েনি সেখানেও। পুরুষ সহকর্মীদের থেকে তাঁর বেতন ছিল অনেক কম। তবে এই সমতা ফেরানোর জন্যই ১৯৭০ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘ওইমেন’স রাইট ল’ রিপোর্টার’ পত্রিকা। যা প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৭২ সালে রুথ বেডার প্রতিষ্ঠা করেন নারী অধিকার প্রকল্পের। যুক্তরাষ্ট্রের একপেশে সমাজ ব্যবস্থা এবং আইনের খোলনলচে বদলে ফেলাই ছিল তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য। সুপ্রিম কোর্টেও তিনি সেই সময় মামলা করেন সংবিধান থেকে লিঙ্গবৈষম্যকে সরিয়ে ফেলার আবেদন নিয়ে।

আরও পড়ুন
প্রয়াত ফরেস্ট ফেন, রেখে গেলেন গুপ্তধনের অপেক্ষায় থাকা অসংখ্য অনুরাগীকে

তার প্রায় দেড় দশক পরে সেই সুপ্রিম কোর্টই তাঁর কাজের জায়গা হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টন এই দায়িত্ব অর্পণ করেন তাঁকে। আমৃত্যু দীর্ঘ ২৭ বছর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবেই কাজ করেছেন তিনি। চেয়েছিলেন আসন্ন নির্বাচনে নতুন রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতায় দেখে স্বেচ্ছাবসর নিতে। কিন্তু তা আর সম্ভব হল না। নির্বাচনের আগেই থেমে গেল হৃদস্পন্দন। বিদায় নিলেন রুথ বেডার গিন্সবার্গ, উদারপন্থীদের অন্যতম কণ্ঠ। প্রবীণা এই বিচারপতির মৃত্যুতে এখন শোকস্তব্ধ যুক্তরাষ্ট্র। চলে যাওয়ার আগে যেন তিনি শিখিয়ে গেলেন ন্যায়বিচার এবং অধিকারের জন্য অক্লান্তভাবে কীভাবে লড়ে যেতে হয়...

আরও পড়ুন
দেশের প্রথম মহিলা কার্ডিওলজিস্ট তিনিই, ১০৩ বছর বয়সে প্রয়াত ডাঃ পদ্মাবতী

Powered by Froala Editor

Latest News See More