তখনও পর্যন্ত তিনি পেশাদার ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৭টি। আর তারপরেই প্রতিদ্বন্দ্বী স্বয়ং বক্সিংয়ের ঈশ্বর। মহম্মদ আলি। তবে সেদিন যেন ম্যাজিক খেলে গেল বক্সিং রিংয়ে। ১৯৭৮ সালে লস ভেগাসের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর কাছে ধরাশায়ী হলেন মহম্মদ আলি। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ইতিহাসের পাতায় নাম তুলে ফেলেছিলেন লিওন স্পিংকস। তবে ঈশ্বরকে হারালেও লড়াই করতে পারলেন না কর্কট রোগের সঙ্গে। অবশেষে হার মানলেন তিনি। ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন আমেরিকান বক্সিং তারকা।
বেশ কয়েক বছর ধরেই স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন স্পিংকস। ২০১৯ সালে তাঁর ধরা পড়ে প্রস্টেট ক্যানসার। শুরু হয় কেমোথেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসাও। তবে ততক্ষণে যে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। বছর দুয়েক ভবিতব্যের সঙ্গে লড়াই চালালেন ঠিকই, তবে দীর্ঘস্থায়ী হল না সেই রিং-ফাইট। বিদায় নিতে হল তাঁকে। শুক্রবার রাতে নেভাদায় মৃত্যু হয় তাঁর। সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী নিশ্চিত করেছেন তাঁর মৃত্যু সংবাদ।
১৯৫৩ সালের ১১ জুলাই লিওনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি প্রদেশে। কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার দরুণ ছোটো থেকেই সম্মুখীন হতে হয়েছিল বর্ণবৈষম্যের। তবে লড়াই থামাননি তিনি। ক্রমাগত অনুশীলনে বাড়িছেন নিজের দক্ষতা। লাইট হেভিওয়েট বক্সার হিসাবেই শুরু হয় তাঁর প্রারম্ভিক কেরিয়ার। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে পর পর তিনটি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েশন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন স্পিংকস।
সেই পারফর্মেন্সের সূত্রেই সুযোগ পাওয়া অলিম্পিকের মঞ্চে। ১৯৭৬-এর মনট্রেয়াল সামার অলিম্পিকে প্রথম পেশাদার আন্তর্জাতিক বক্সিং মঞ্চে অভিষেক স্পিংকসের। আর সেখানেই স্বর্ণ পদক জিতে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন স্পিংকস। তার ঠিক ১৮ মাসের মধ্যেই তিনি ঐতিহাসিক বক্সিং ম্যাচে মহম্মদ আলিকে হারিয়ে তৈরি করেন এক ইতিহাস। যদিও ৭ মাস পরে পুনরায় মহম্মদ আলির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমে হারতে হয়েছিল তাঁকে।
তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসাবে মাত্র ৭ মাস স্থায়ী হয়েছিল তাঁর কেরিয়ার। ১৯৭৮ সালে পরাজিত হওয়ার পর হঠাৎই সেরার দৌড় থেকে খানিকটা যেন ছিটকে গিয়েছিলেন স্পিংকস। ১৯৮১ সালে আবার সুযোগ এলেও তার সদ্ব্যবহার করতে পারেননি তিনি। ল্যারি হোমসের বিরুদ্ধে ফাইনালে তৃতীয় রাউন্ডেই নক আউট হয়ে যান স্পিংকস।
এর পর হেভিওয়েট প্রার্থীর পরিবর্তের ক্রুসারওয়েটেই ক্যারিয়ারের শেষ অবধি লড়াই করেছেন স্পিংকস। তবে সেখানেও বড়ো জয় আসেনি। চ্যাম্পিয়নশিপের দোরগোড়া থেকে ফিরে আসতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। ৮ বছর পর ১৯৯৫ সালে ৪২ বছর বয়সে অবসর ঘোষণা করেন তিনি।
আরও পড়ুন
বক্সিং বিশ্বকাপে বিরল সাফল্য, ভারতের ঝুলিতে ৩টি স্বর্ণপদক
তবে ৯০-এর দশকে বক্সিংয়ে বড় কোনো খেতাব না অর্জন করলেও মার্শাল আর্ট রেসলিংয়ে ১৯৯২ সালে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হন স্পিংকস। প্রাইমো কারনেরার পর তিনিই দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিত্ব যিনি বক্সিং এবং রেসলিং উভয় প্রতিযোগিতাতেই ঝুলিতে পুরেছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব।
অবসর গ্রহণের পর বাকি জীবন খানিক নীরবেই কাটিয়েছেন এই কিংবদন্তি বক্সার। নেভাদায় স্ত্রী-র সঙ্গেই অনাড়ম্বর জীবনযাপন করেছেন। তবে অসম্ভব মদাসক্তিই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় স্পিংসের। ২০০৯ সালে তাঁকে নিয়ে তৈরি হয় ‘ফেসিং আলি’ নামাঙ্কিত একটি তথ্যচিত্র। তাছাড়া ২০১৭ সালে নেভাদা বক্সিং হল অফ ফেম দেওয়া হয় লিওন স্পিংকসকে। একই সঙ্গে এই সম্মান দেওয়া হয়েছিল তাঁর ভাই মাইকেল স্পিংসকেও।
পদকে সাজানো, দারুণ উজ্জ্বল কেরিয়ার হয়তো ছিল না স্পিংসের, কিন্তু তা সত্ত্বেও একাধিক কিংবদন্তির জন্ম দিয়ে গেছেন এই মার্কিন বক্সিং তারকা। কখনো কখনো ঝলসে উঠেছেন অবিশ্বাস্য ফর্মে। বক্সিংয়ের ইতিহাস দেখতে গেলে সেইসব মুহূর্তদের অস্বীকার করার জায়গা নেই কোনো। স্পিংসের মৃত্যুতে যেন উল্টে গেল ইতিহাসের সেই পাতাই…
আরও পড়ুন
বক্সিং-এ ভারতসেরা হয়েও অলিম্পিকের ডাক ফেরান কলকাতা পুলিশের রনি মুর
Powered by Froala Editor