প্রয়াত ফরেস্ট ফেন, রেখে গেলেন গুপ্তধনের অপেক্ষায় থাকা অসংখ্য অনুরাগীকে

মানুষকে গৃহবন্দি দশা থেকে বার করে প্রকৃতির কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে, নিজেই তৈরি করেছিলেন রহস্য। লুকিয়ে রেখেছিলেন কোটি কোটি টাকার গুপ্তধন। গুপ্তধন-সন্ধানী এবং ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এভাবেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন ফরেস্ট ফেন। নিউ মেক্সিকোর সান্টা ফে-তে গত মঙ্গলবারই চলে গেলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।

ফরেস্ট ফেনের বেড়ে ওঠা টেক্সাসের টেম্পলে। বাবা ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ছোট বেলা থেকেই যিনি ফরেস্ট ফেনের মধ্যে বুনে দিয়েছিলেন অভিযানের, সাহসিকতার বীজ। গ্রীষ্ম পড়লেই সপরিবারে ফরেস্ট ফেন হাজির হতেন ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে। সেখানে অবাধ প্রান্তরে ভাইয়ের সঙ্গেই ছোট ছোট অভিযান চালাতেন ফেন।

পরবর্তীকালে যোগ দিয়েছিলেন আমেরিকার বিমানবাহিনীতে। প্রায় দুই দশক কাজ করেছেন সেখানে। অবসরগ্রহণের পরে শুরু করেন প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহের ব্যবসা। পুরাতাত্ত্বিক ভাস্কর্য, পুরনো নথি, হিরে-জহরত এবং নানান ঐতিহাসিক বিরল মূর্তি সবই পাওয়া যায় তাঁর গ্যালারিতে। তবে ব্যবসা ছাড়াও নিজেও একজন অন্যতম সংগ্রাহক ছিলেন ফরেস্ট ফেন। ছিল নিজের আলাদা সংগ্রহশালা।

আশির দশকে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ফেন। তারপর চেষ্টাও করেছিলেন আত্মহত্যার। কিন্তু জীবন থেমে যায়নি। লড়াইটা জিতেছিলেন শেষ অবধি তিনি। আর অনুভব করেছিলেন সময়টা কাজে লাগাতে হবে তাঁকে। অনেকটা পৃথিবী এখনও দেখার বাকি। রুকস্যাক গুছিয়ে বয়সকে তোয়াক্কা করেই তাই ঘুরে বেড়িয়েছেন রকি মাউন্টেনে। চিনতেন সমস্ত পথ, পর্বতের পুঙ্খানুপুঙ্খ ভূগোল।

আরও পড়ুন
কবিতার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল সংকেত, অবশেষে উদ্ধার ফরেস্ট ফেনের গুপ্তধন

তবে নিজে শুধু ঘুরতে চাননি ফেন। চেয়েছিলেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষই চিনতে শিখুক বাইরের প্রকৃতিকে। ছুঁয়ে দেখুক তাই রূপ। নিজের জীবনকাহিনী ‘দ্য থ্রিল অফ দ্য চেস’-এর শেষে তাই একটি রহস্য তৈরি করেছিলেন ফেন। ২৪ লাইনের একটি কবিতা লিখেছিলেন তিনি। যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল একটি মানচিত্র। রকি পর্বতে তাঁর রেখে আসে ১৮ কেজি সোনা-দানা, মণিমাণিক্যে ভরা একটা বাক্সের কাছে পৌঁছানোর সাংকেতিক মানচিত্র।

হাজার হাজার মানুষ চেষ্টা করেছেন সেই রহস্য উদ্ঘাটনের। অনেকে অভিযানে গিয়ে মারাও গেছেন। তবে সেই বই লেখার দশ বছর পর, এক ব্যক্তি খুঁজে পেয়েছিলেন সেই গুপ্তধনের বাক্স। গত জুলাই মাসেই। এই ঘটনায় উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন ফরেস্ট ফেন। পাশাপাশিই দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন তাঁর এই ছেলেমানুষির জন্য। ক্ষমা চেয়েছিলেন তাঁর এই গুপ্তধনের সন্ধানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া কিছু প্রাণের জন্যেও।

আরও পড়ুন
এই রেস্তোরাঁর নিচে লুকিয়ে আছে প্রাচীন গুপ্তধন

তবে তাঁর এই গুপ্তধন যে কোনো ব্যক্তি একদিন আবিষ্কার করবেই, এই আশাতেই বুক বেঁধে ছিলেন তিনি। মনে-প্রাণে চাইতেন মৃত্যুর আগে যেন এই রহস্যের সমাধান দেখে যেতে পারেন তিনি। তেমনটাই যেন হল। সেই বাক্স খুঁজে পাওয়ার মাত্র আড়াই মাস পরেই চলে গেলেন ফরেস্ট ফেন। তৈরি করে গেলেন একটা কিংবদন্তি। যে কিংবদন্তির সামনে মলিন তাঁর এই চলে যাওয়া। ফরেস্ট ফেন যে আর নেই, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না লক্ষ লক্ষ অনুগামী। তাঁদের কাছে যেন ইহজগৎ ছাড়িয়ে এবার অন্য পৃথিবী অন্বেষণ করতেই যেন বেরিয়ে পড়েছেন ফরেস্ট ফেন...

Powered by Froala Editor

More From Author See More