এখনও আমাজনের আগুন নেভেনি। জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ফুসফুস। চারদিকে জোর আলোচনা, আমাজনের এই পরিণতির জন্য দায়ী কে বা কারা। এরই মধ্যে জানা গেল আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০০২ থেকে শুরু করে ২০১৮ অবধি বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রায় ১৭৩৮ জন পরিবেশকর্মী-কে হত্যা করা হয়েছে। এনজিও গ্লোবাল উইটনেসের রিপোর্ট অনুযায়ী এমন তথ্যই সামনে এসেছে।
শুধুমাত্র ২০১৭-তেই মেরে ফেলা হয়েছে ২০৭ জন পরিবেশকর্মীকে। ২০১৮-তে সংখ্যাটা ১৬৪। যদিও ২০১৭-র থেকে কম, কিন্তু সমস্যা বেড়ে চলছে প্রতিনিয়ত। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে তিন জন পরিবেশকর্মীকে হত্যা করা হয়। ২০০২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত যে সমস্ত রিপোর্ট নথিভুক্ত হয়েছে, তাতে হত্যাকারীদের মধ্যে মাত্র ১০%-কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
নেচার্স সাসটেইনেবিলিটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিবেশকর্মীদের হত্যার কারণ হল, তাঁরা বেআইনি ভাবে কাঠ, জীবাশ্ম জ্বালানি, জল ও প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম চিকো মেন্ডিস। একজন ব্যবসায়ী, ইউনিয়ন নেতা ও পরিবেশকর্মী। ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলে স্থানীয় মানুষদের অধিকার রক্ষায় সরব গিয়েছিলেন তিনি। আমাজনকে চোরাকারবারীদের থেকে রক্ষাও করতে চেয়েছিলেন। প্রতিদান স্বরূপ ১৯৮৮-তে নিহত হন তিনি। এরপরের দুটি নামও ব্রাজিলেরই। হোসে ক্লাওডিও রেবেইরো ও মারিয়া ডু এসপেরিটো সান্টো। আমাজন অঞ্চলের কাঠের চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ২০১১ সালে হত্যা করা হয় তাঁদের।
কম্বোডিয়ার ব্যাপারটা আবার ভিন্ন। ন্যাচারাল রিসোর্স প্রোটেকশন গ্রুপের ডিরেক্টর চ্যাট উটি প্রতিবাদ করেছিলেন সরকারের বিরুদ্ধে, চোরাকারবারিদের মদত দেওয়ার জন্য। পরিণাম একই। মৃত্যু। ২০১৫ সালে মারা যান বের্টা ক্যাসেরেস। হন্ডুরাসের লেনকা অঞ্চলের অধিবাসীদের জল ও জমির অধিকারে হস্তক্ষেপ করে একটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এর প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে আন্দোলনও চলেছিল।
কিন্তু এতগুলো মৃত্যুর নেপথ্যে কারা? উত্তরটা হতে পারে - সরকার। চমকে যাও য়ার মত হলেও এটাই সত্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, চোরাকারবারি থেকে শুরু করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিদের প্রাকৃতিক সম্পদ বেআইনি ভাবে ব্যবহারে মদত দিয়েছে সরকার। চ্যাট উটির ঘটনায় তাঁকে হত্যার ভূমিকা নিয়েছিল সে-দেশেরই মিলিটারি পুলিশ। সঙ্গে আছে দুর্বল আইন আর দুর্নীতি। পরিবেশকর্মী হত্যায় সবার প্রথমে আছে ফিলিপিন্সের নাম। পরিবেশকর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা সেখানে ৩০, ব্রাজিলে ২০ আর ভারতে ২৪। হ্যাঁ, পরিবেশকর্মী হত্যায় ব্রাজিলকে ছাপিয়ে গেছে ভারত।
এভাবেই এগোচ্ছে বিশ্ব, এগোচ্ছে সভ্যতা। এখন থেকেই সচেতন না হলে, নিঃস্ব হতে পৃথিবীর আর বেশি দেরি নেই।