আমাজনের (Amazon Forest) প্রাচীন জঙ্গলে বিরাট বিরাট গাছে আস্তানা বহু পাখির। বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল বিশেষ একটি রোগ। সমস্ত পালক হয় ঝরে যাচ্ছে, অথবা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আর তার কারণ খুঁজতে গিয়েই অবাক হলেন বিজ্ঞানীরা। পাখিদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে পারদ। আর তার উৎস বৃক্ষগুলিই। এতদিন জলজ বাস্তুতন্ত্রে পারদ দূষণ (Mercury Pollution) নিয়ে নানা গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু অরণ্য অঞ্চলে পারদ দূষণের প্রভাব সামনে এল এই প্রথম। আর সেই দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রাণী, এমনকি মানুষের শরীরেও।
ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ পত্রিকায়। আমাজন অরণ্যের পেরু অঞ্চলে গবেষণা চালিয়েছেন তাঁরা। বিগত ৩ বছরের তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। এরপর পারদকেই পাখিদের রোগের কারণ বলে দায়ী করছেন। শুধু পাখিদের শরীরেই নয়, অরণ্যের বড়ো বৃক্ষদের রস পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে তাতেও যথেষ্ট পরিমাণে পারদ রয়েছে। আর সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হল, এখানেও পারদের সঙ্গে জল মিশছে। ফলে তৈরি হচ্ছে মিথাইলমার্কারি।
সাধারণত মাছেদের শরীরে পারদ প্রবেশ করলে সেখানে মিথাইলমার্কারি তৈরি হয়। তারপর ছোটো মাছদের শরীর থেকে বড়ো মাছের শরীরে এবং বড়ো মাছের শরীর থেকে ক্রমশ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সেই বিষ। তবে গাছের শরীরেও জল এবং লবন মিশে মিথাইলমার্কারি তৈরি হচ্ছে বলে মত বিজ্ঞানীদের। এর কারণ সম্পর্কেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা। দেখা যাচ্ছে, সোনা খনির আশেপাশের গাছেদের শরীরে পারদের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। সোনা পরিশোধনের কাজে পারদের ব্যবহার বহুদিনের। সেখান থেকেই গাছের শরীরে পারদ ছড়িয়ে পড়ছে।
বিজ্ঞানীরা এটাও দেখিয়েছেন, নতুন খনি অঞ্চলের চেয়ে পুরনো খনি অঞ্চলের আশেপাশে পারদের পরিমাণ বেশি। অবশ্য আধুনিক প্রযুক্তিতে কোনো উন্নতি ঘটেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, পুরনো খনি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে পারদ জমেছে। সেই তুলনায় নতুন খনি অঞ্চলে পারদ জমছে অনেক কম সময় ধরে।
আরও পড়ুন
পরিকল্পিতভাবে কীটনাশক ছড়িয়ে আমাজন ধ্বংস, অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের
পেরুর উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই পারদঘটিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এতদিন এর জন্য নদীর জলকেই দায়ী করছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেটুকুই যে কারণ নয়, তাই প্রমাণিত হল সাম্প্রতিক গবেষণায়।
আরও পড়ুন
এক বছরে দাবানলে ১৭ মিলিয়ন প্রাণী মৃত আমাজনে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আমাজন নিধনে জড়িত বহুজাতিক ফ্যাশন ও ডিজাইন সংস্থাগুলিও