সঙ্কটে আমাজন। বিগত দেড় বছর ধরে এই কথার সঙ্গে আমরা সকলেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। পৃথিবীর ফুসফুসে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড হোক, বা বিরল প্রাণীর বিপন্নতা, বারবার উঠে এসেছে আমাজনের কথা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই বদলে যাওয়া প্রকৃতিতে সমস্ত প্রজাতির থেকে অনেক বেশি বিপন্ন মানুষের ভাষা। আর আমাজনের আদিবাসীদের ভাষাও হারিয়ে যেতে চলেছে একটু একটু করে।
এখনও অবধি সারা পৃথিবীতে ৭ হাজারের বেশি আদিবাসী ভাষা আছে। তবে কতদিন এইসমস্ত ভাষা টিকে থাকবে, সেটা সত্যিই সন্দেহের। পরিসংখ্যান বলছে পৃথিবীর ২৫ শতাংশ ভাষাই বিপন্ন। আর এই বিপন্নতার হার যেকোনো প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিতের বিপন্নতার হারকেও হার মানাবে। কিন্তু এই বিপন্নতার প্রকৃত কারণ কী? ভাষা আগ্রাসনের রাজনীতি তো রয়েছেই। তবে তার থেকেও বেশি করে গবেষকরা জোর দিচ্ছেন প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্কটের উপর। বনভূমি ধ্বংস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে যাচ্ছেন আরণ্যক উপজাতির মানুষরাও। আর হারিয়ে যাচ্ছে তাঁদের ভাষা। কেউ কেউ সভ্য জগতে এসে জায়গা করে নিলেও সেখানে তাঁদের ভাষার জায়গা হচ্ছে না।
বিগত দেড় বছরে আমাজনে ৭ শতাংশ বনভূমি হারিয়ে গিয়েছে। আর গত ৫০ বছরে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বনভূমিই তথাকথিত উন্নয়নের কবলে পড়েছে। আমাজনের আদিম জনজাতির মানুষদের প্রতিও সঠিক দৃষ্টি না দেওয়ার অভিযোগ ব্রাজিল সরকারের বিরুদ্ধে উঠেছে বারবার। এখনও সেখানে ৪৭টির মতো আদিম ভাষাগোষ্ঠী বেঁচে আছে। গত শতাব্দীতে যে সংখ্যাটা ৫০০-র কম ছিল না। তবে এই বিপন্ন ভাষাগোষ্ঠীগুলির কোনোটিতে আছেন ৫ জন সদস্য। কোনো ভাষায় কথা বলেন কেবল একজন। ফলে এগুলিও হারিয়ে যেতে চলেছে ক্রমশ। আর ভাষার সঙ্গে যে জড়িয়ে থাকে সংস্কৃতিও। একটি ভাষার মৃত্যু মানে একটি ইতিহাসের মৃত্যু। এখন এই সমস্ত ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আমাজন রক্ষায় টহল আদিবাসী নারীদের গেরিলা বাহিনীর; কমছে চোরাশিকার, অরণ্যনিধন