নীল সমুদ্রের মাঝে একখণ্ড দ্বীপ। দ্য সোলেনটিয়াম আইল্যান্ড। যাঁরা বাইবেল পড়েছেন, তাঁদের নিশ্চই মনে পড়ে যাবে সোলেনটিয়ামের গসপেলের কথা। স্বর্গের এক কাল্পনিক উদ্যান বর্ণিত হয়েছে সেখানে। সেখানে যাঁরা থাকেন, তাঁদের জীবনে কোনো দুঃখ নেই। কোথাও কিছুর অভাব নেই। এই দ্বীপও যেন ঠিক তেমনটাই। অন্তত তাই মনে করেন এখানকার বাসিন্দারা। আর বাইবেলের বর্ণনার মতো করেই সাজিয়েছেন চারদিক। ফুলে ঢাকা পথে উপর দিয়ে পাখির কলকাকলি শুনতে শুনতে হাঁটলে মনে হবে যেন কোনো শিল্পীর আঁকা ছবি জীবন্ত হয়ে ঘিরে ধরেছে।
তবে আজ থেকে ৬০ বছর আগেও এই দ্বীপের অবস্থাটা এমন ছিল না। নিকারাগুয়ার কাছে ৩৬টি ভূখণ্ড নিয়ে তৈরি এই দ্বীপের কোনো সন্ধানই জানতেন না সভ্য মানুষ। আর বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে সভ্যতা যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আধুনিকতা কাকে বলে, জানতেন না কেউই। ঠিক এই সময়, ১৯৬৩ সালে ক্যাথেলিক ধর্মপ্রচারক আর্নেস্টো কার্ডিনাল এসে পৌঁছন এই দ্বীপে। আর এখন সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে সোলেনটিয়াম আইল্যান্ড এক মনোরম পর্যটনক্ষেত্র।
ফাদার কার্ডিনাল যে শুধুই ধর্মপ্রচার করতে এসেছিলেন, তা নয়। বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবী থেকে মুক্তির আশায় এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। নিজে কবিতা লিখতেন, মূর্তি তৈরি করতেন। আর দ্বীপের আদিম অধিবাসীদের সঙ্গে বাইবেলের নানা সুন্দর বর্ণনা আলোচনা করতেন। যেখানে হিংসার কোনো ছাপ নেই। সবাই পরম শান্তিতে বাস করছেন। তবে তা যে আধুনিকতা বিমুখ, এমন নয়। তাঁর হাত ধরেই মোটরচালিত নৌকো চালু হয় সমুদ্রে। কৃষকরা পাথুরে মাটিতে জলের জন্য ডিপ টিউবওয়েল খুঁড়তে শেখেন। এভাবেই এগিয়ে চলে মানুষের জীবন। আর ফাদারের মনের মতো করে সেজে উঠতে থাকে আদিম অরণ্যময় এই দ্বীপ।
তবে দ্বীপকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও ফাদার কার্ডিনাল সেই কাজটা একা করেননি। করেছেন দ্বীপের অধিবাসীদের সঙ্গে নিয়েই। এই দ্বীপের নামকরণও করেছেন সাধারণ মানুষই। অবশ্য বাইবেলের সেই বর্ণনার সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ফাদার কার্ডিনাল। সভ্য সমাজ যখন ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেখে বীতশ্রদ্ধ, তখন এমন দৃশ্য সত্যিই অবাক করে। আসলে মানুষের এগিয়ে চলার পথে এভাবেই যুক্ত হয়ে গিয়েছিল ধর্মবিশ্বাস। শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা কুৎসিত হয়ে উঠেছে। বিচ্ছিন্ন সোলেনটিয়াম দ্বীপে সেই ঘটনা ঘটতে এখন ঢের দেরি।
আরও পড়ুন
নেই কোনো প্রবেশ-প্রস্থান, মুহূর্তদের উপভোগ করতে শেখায় জাপানের এই রেলস্টেশন
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
খড়-কাঠি দিয়ে দানবমূর্তি কানাডার পার্কে, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ছবি