Powered by Froala Editor
ফিরে দেখা ২০২০ : জীববিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত উল্লেখযোগ্য নতুন প্রজাতি
১/১৪
একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে প্রায় সব কিছুকেই জয় করার ক্ষমতা রাখে বিজ্ঞান। তা সত্ত্বেও বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের একটা বড়ো অংশই লুকিয়ে রয়েছে মানুষের জ্ঞানের বাইরে। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়েও তাই নতুন করে চোখে পড়ছে সেসব প্রাণীদের অস্তিত্ব। চলতি বছরে এমনই কয়েকশো নতুন প্রজাতির প্রাণী, ছত্রাক, মস এবং ফার্নের সন্ধান দিলেন বিজ্ঞানীরা। বছরের শেষে এসে ফিরে দেখা যাক তার মধ্যেই উল্লেখযোগ্য কিছু আবিষ্কার...
২/১৪
মাউস লিমুরের নতুন প্রজাতি— মাইক্রোসেবার জোনাহি। মূলত নিশাচর এই নতুন প্রজাতির প্রাণীটির আয়তন মানুষের হাতের মুঠোর থেকেও ছোটো। ক্ষুদ্র আকারের জন্যই এই লিমুরের নামকরণে রয়েছে ‘মাউস’-এর উল্লেখ। উত্তরপূর্ব মাদাগাস্কারের মানানারা নর্ড জাতীয় উদ্যানে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এই নতুন লিমুরের প্রজাতিকে। বর্তমানে ১০৮টি লিমুরের প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় মাদাগাস্কারে। যার মধ্যে ২৫টি মাউস লিমুরের প্রজাতি। বন-নিধনের কারণে প্রতিটি প্রজাতির অস্তিত্বই সংকটে।
৩/১৪
লিলিপুটিয়ান ফ্রগ— নোভেল্লা নভ স্পিসিস। বা সহজ ভাষায় লিলিপুটিয়ান ফ্রগ। নাম থেকেই আয়তন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় প্রাণীটির। হ্যাঁ, এই ব্যাঙের দৈর্ঘ্য মাত্র ১ সেন্টিমিটার। তার ওপর এই ব্যাঙের বাসস্থান মূলত ঘন মসে আচ্ছাদিত অঞ্চল। কাজেই এতদিন মানুষের দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে ছিল এই প্রাণীটি। চলতি বছরে বলিভিয়ার জঙ্গো অঞ্চলের ক্লাউড ফরেস্টে একটি অভিযানের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে আশ্চর্য এই উভচর প্রজাতিকে।
৪/১৪
বিলুপ্তপ্রায় পোপা লেঙ্গুর— মায়ানমারের ঘন জঙ্গলের মধ্যে মাত্র ২৬ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বসবাস এই বিরল লিমুরের। ট্রাকাইপিথেকাস পোপা— এপ গোত্রীয় এই ধরণের প্রাণীর অস্তিত্ব যে পৃথিবীতে রয়েছে, তা কার্যত ধারণার বাইরে ছিল বিজ্ঞানীদেরও। বিজ্ঞানী থোয়াং উইংয়ের নজরে আসতে সন্দেহ জাগে তাঁর মনে। জিন সংগ্রহ করে অন্যান্য এবং অবলুপ্ত বানর প্রজাতি প্রাণীর সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন তিনি। শেষ অবধি জানা যায়, সম্পূর্ণ নতুন লেঙ্গুর প্রজাতি এটি। তবে আবিষ্কারের পরই ‘আশঙ্কাজনক’ ট্যাগ বসল পোপা লেঙ্গুরের গায়ে। বর্তমানে পৃথিবীতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে মাত্র ২০০-২৬০টি প্রাণী।
৫/১৪
সালাজারের পিট ভাইপার— নাম শুনেই হ্যারি পটারের গন্ধ পাচ্ছেন নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, গল্পের চরিত্রের সঙ্গে মিল দেখেই ইচ্ছাকৃতভাবেই এই নামকরণ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। বছরের মাঝামাঝি সময়ে অরুণাচল প্রদেশের হিমালয়ের উপত্যকায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এই পিট ভাইপার। সম্পূর্ণ সবুজ রঙের ওপর মাথার দুপাশে লালচে কমলা রঙের দাগ এই নতুন সর্প প্রজাতির বিশেষত্ব। মূলত নিশাচর এই প্রাণী গাছের সঙ্গে মিশে থাকে অদ্ভুতভাবে। বিজ্ঞানসম্মত নাম ট্রাইমাররেসারাস সালাজার।
৬/১৪
ম্যান্টিডাক্টাইলাস জায়েন্ট ফ্রগ— বিজ্ঞানীদের কাছে খানিকটা অজানা থাকলেও, মাদাগাস্কারের মেনুতে প্রায়শই দেখা মিলত এই ব্যাঙের। চার ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এই ব্যাঙের মাংস স্থানীয় মানুষদের কাছে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। চলতি বছরে মাদাগাস্কারে গবেষণারত কিছু বিজ্ঞানী ডিনার টেবিলে ব্যাঙের রেসিপি দেখেই শুরু করেছিলেন অনুসন্ধান। তারপর যা জীবন্ত নমুনা দেখেই ছানাবড়া হয়ে যায় তাঁদের চোখ। নতুন প্রজাতিই নয়, সম্পূর্ণ নতুন গোত্রের এই প্রাণী। নতুন এই ব্যাঙের নামকরণ করা হয় ম্যান্টিডাক্টাইলাস রাডাকা নামে।
৭/১৪
অ্যাক্রোটাফাস ওয়াস্প— পরজীবী আর বোলতা— এই দুটি শব্দ একসঙ্গে মেলানো খানিকটা শক্ত কাজ তো বটেই। তবে বিজ্ঞানীরা চলতি বছরেই এমন ১৫টি বোলতার প্রজাতি খুঁজে পেয়েচছেন ব্রাজিলের আমাজন এবং আন্দিয়ান ক্লাউড ফরেস্টে। সদ্য খুঁজে পাওয়া এই বোলতা ডিম পাড়ে মাকড়সার দেহের ওপরে। আর তারপরেই স্বাভাবিক জাল বোনা বন্ধ করে দেয় মাকড়শারা। বরং এই বোলতার লার্ভাকে বিশেষভাবে সুরক্ষা প্রদানের জন্য জাল তৈরি করে তারা। পিউপাটি বোলতায় পরিণত হলে মাকড়সাটিকে ভক্ষণ করে উড়ে যায়। বোলতার অদ্ভুত এই আচরণে চমকে গিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরাও।
৮/১৪
নিউ গিনি’র অজানা অর্কিড— পৃথিবীতে অবস্থিত যে কোনো দ্বীপের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মেলে নিউ গিনিতে। চলতি বছরের শুরুতে কিউ বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক গবেষক নিউ গিনি অভিযানে গিয়েই খুঁজে পান আরও ১৯টি নতুন অর্কিড প্রজাতি। তার মধ্যে ১৬টি প্রজাতি বাল্বোফাইলাম গোত্রের। বাকি ৩টি ডেন্ড্রোবিয়াম গোত্রের প্রজাতি। তবে ফুল ছাড়া অর্কিডগুলির পাতা বা অন্যান্য বৈশিষ্ট দেখে আলাদা করে চেনার সুযোগ নেই কোনো। এই আবিষ্কারের পরেও বহু অজানা উদ্ভিদ প্রজাতি লুকিয়ে রয়েছে নিউ গিনিত— এমনটাই বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।
৯/১৪
ক্যারোলিনা স্যান্ডহিল স্যালাম্যান্ডার— ইউরিসিয়া অ্যারিনিকোলা বা ক্যারোলিনা স্যান্ডহিল স্যালাম্যান্ডার। নাম থেকেই বোঝা যায় এই প্রাণীটির বাসস্থান। উজ্জ্বল লাল বর্ণের এই স্যালাম্যান্ডার মূলত খুঁজে পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনা প্রদেশের বালিপাথুরে টিলাগুলিতে। তবে আজকের নতুন আবিষ্কার নয় এই প্রাণীটি। দীর্ঘ ৫০ বছর আগে খুঁজে পাওয়া গেলেও, অন্য একটি স্যালাম্যান্ডার প্রজাতির সঙ্গে বেশ কিছু মিল থাকায় ধন্ধে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি জিনের বিশ্লেষণ করে নতুন নামকরণ করা হয় এই প্রাণীটির।
১০/১৪
নতুন উদ্ভিদ পরিবারের চিরহরিৎ গুল্ম— টিগানোফাইটন কারাসেন্স। দক্ষিণ নামিবিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে পাওয়া এই গুল্মের মধ্যে অদ্ভুত এক বৈশিষ্ট লক্ষ্য করেন বিজ্ঞানীরা। ক্যাকটাস জাতীয় গুল্মটির পাতার বদলে রয়েছে আঁশ। হ্যাঁ, উদ্ভিদের শরীরেও আঁশ। তবে তা সবুজ ক্লোরোফিল সমৃদ্ধ। তবে ক্যাকটাস বললেও অনেকাংশে ব্রকলি বা বাঁধাকপির সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এই প্রজাতির। কাজেই পূর্ব-পরিচিত কোনো উদ্ভিদ পরিবারের মধ্যেই এই প্রজাতিকে রাখতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তৈরি করতে হয়েছে একেবারে ভিন্ন একটি পরিবার। এখনও পর্যন্ত নামিবিয়ার মরুভূমিতে ১০০০টির কাছাকাছি এই উদ্ভিদের নমুনা খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
১১/১৪
শ্রীলঙ্কার দৈত্যাকার কাঁকড়াবিছে— শ্রীলঙ্কার ইয়ালা জাতীয় উদ্যানে একটি রাত্রিকালীন জরিপ চলাকালীন বিজ্ঞানীরা খুঁজে পান এই ভয়ঙ্কর আর্থ্রোপোডা প্রাণীর। হেটেরোমেট্রাস ইয়েলিনসিস নামের এই দৈত্যাকার কাঁকড়াবিছের শুধু দেহের দৈর্ঘ্যই হয় ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত। শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কার ভারতমহাসাগরীয় দ্বীপেই দেখা মেলে এই প্রজাতির। ধীর গতির জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্যান্য প্রজাতির কাঁকড়াবিছের শিকার হয় এই দৈত্যাকার বিছেটি। কাজেই সদ্য খুঁজে পাওয়া এই বিছের সংখ্যার ব্যাপারেও যথেষ্ট আশঙ্কায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
১২/১৪
পার্পল ট্রি ক্র্যাব— চলতি বছরের শুরুর দিকে লেপটারমা বিজু বা পার্পল ট্রি ক্র্যাবের অস্তিত্ব খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। ভারতের কেরালার চিথারি নদী তীরবর্তী অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে খুঁজে পাওয়া যায় এই ছোট্ট বেগুনি-গোলাপি বর্ণের কাঁকড়াকে। আয়তন ১৩-১৪ সেন্টিমিটার। গবেষকরা এই কাঁকড়াকে অভিহিত করেছেন ‘ইকোসিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার’ নামে। কেননা ম্যানগ্রোভের মাটিতে ক্রমাগত গর্ত করে এবং জৈব বিয়োজন করে প্রকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে এই কাঁকড়া।
১৩/১৪
নতুন ৬টি ব্যাঙের ছাতার সন্ধান— লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর— পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলির মধ্যে একটি। সেই বিমানবন্দর লাগোয়ে নদীর ধারেই সেপ্টেম্বর মাসে পাওয়া গিয়েছিল কোর্টিনারিয়াস হিথরায়ি নামের একটি ব্যাঙের ছাতা ছত্রাক। পরে স্কটল্যান্ড আর ইংল্যান্ডে একই গোত্রের আরও ৫টি প্রজাতির ব্যাঙের ছাতা পাওয়া যায়। ওক, পাইন জাতীয় গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এই উপকারী ছত্রাক।
১৪/১৪
নতুন প্রজাতির ভেলভেট স্পাইডার— আয়তনে প্রায় ৮ মিলিমিটার। ছোট্ট এই মাকড়সার প্রজাতিকে সম্প্রতি ইরানে খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। নাম লোরিডিয়া ফোনিক্স। নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে দুই কিংবদন্তির নাম। হ্যাঁ, গোত্রের নামকরণ হয়েছিল পাঙ্ক রক মিউজিসিয়ান লো রিডের নামে। কারণ, এই মাকড়সার দেহে রয়েছে স্পাইক করা চুলের মতো ভেলভেটের রোম। অন্যদিকে কালো দেহের ওপরে সাদা এবং লাল বর্ণের ছাপের কারণে তার রূপ অনেকটা জোয়াকিম ফোনিক্স অভিনীত জোকার চরিত্রের মতো। অবাক করার বিষয় হল এই মাকড়সা জাল বোনে সমাজবদ্ধভাবে।