ভাইরাসের পর এবার সংক্রমণ ঘাতক ছত্রাকের, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা

একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর। করোনাকে হারিয়েও আর নিস্তার নেই মানুষের। এবার কোভিডজয়ীদের দুর্বল শরীরে বাসা বাঁধছে আরও এক মারণ অসুখ। না, এবার কোনো ভাইরাস নয়। বরং, এবারের ঘাতক ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামের একটি ছত্রাক। দিল্লি ও গুজরাটে ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে এই ছত্রাকের সংক্রমণের ঘটনা। কোভিডের পাশাপাশি সমানভাবে বাড়ছে এই রোগের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমিতের সংখ্যাও। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রোগ পরিচিত মিউকরমাইকোসিস নামে।

বিগত দু’সপ্তাহে চল্লিশটিরও বেশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়েছে গুজরাটে। যাঁদের মধ্যে সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন ৮ জন। শুধু দৃষ্টিশক্তিই নয়, রীতিমতো প্রাণঘাতী হতে পারে এই বিরল ছত্রাকের সংক্রমণ। তবে প্রাথমিক স্তরে চিকিৎসা শুরু হলেই এই রোগের পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। 

তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নতুন কোনো রোগ নয়। এর আগেও নজরে এসেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঘটনা। তবে তা আক্ষরিক অর্থেই ছিল বিরল। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিই তার প্রভাব বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। প্রথমত কোভিডে আক্রান্ত হলে দুর্বল হয়ে পড়ে শরীর। দৈহিক প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পায় অনেকটাই। সেই সুযোগেই ফুসফুসে বাসা বাঁধে এই ছত্রাক। পাশাপাশি কোভিড চিকিৎসায় স্টেরয়েডের ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দেয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকি। বিশেষত সংকটজনক অবস্থা থেকে ফিরে আসা কোভিডজয়ীদের মধ্যেই এই ছত্রাকের সংক্রমণ চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। 

প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে হচ্ছে এই সংক্রমণ? কতটাই বা ছোঁয়াচে এই রোগ? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বায়ুমণ্ডলে আমাদের অলক্ষ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ঘাতক ছত্রাক। নিঃশ্বাসের সঙ্গে তা শরীরে প্রবেশ করে বাসা বাঁধছে ফুসফুসে। অনেকক্ষেত্রে শরীরে ক্ষতস্থান থেকেও দেহে ঢুকে পড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। তবে সুস্থ মানুষের সাধারণ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে হারিয়ে দাপট দেখাতে পারে না এই ঘাতক জীবাণু। তবে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে প্রকট হয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রভাব। 

আরও পড়ুন
মহামারীর তৃতীয় তরঙ্গ মোকাবিলায় উদ্যোগী মহারাষ্ট্র, সংক্রমণের কেন্দ্রে থাকতে পারে শিশুরা

ফুসফুসে সংক্রমণ হলেও, খুব অল্প সময়েই সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ছত্রাকটি। সাইনাস এবং মস্তিষ্কেও পৌঁছে যেতে পারে তাঁর সংক্রমণের জাল। রক্তচক্ষু, গাল ফুলে যাওয়া, নিঃশ্বাসে সমস্যা, বুকে যন্ত্রণা, সর্দি-কাশি অথবা জ্বর এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। তবে সাধারণ রক্তপরীক্ষায় এই ছত্রাককে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন বায়োপ্সি পরীক্ষার। আর সেই জায়গাটাতেই রয়ে যাচ্ছে ফাঁক। অনেকক্ষেত্রেই সাধারণ জ্বরের লক্ষণ ভেবে মিউকরমাইকোসিসকে অবহেলা করছেন রোগীরা। দেহে ব্যাপকমাত্রায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর, চিকিৎসকদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। সেই কারণেই দ্রুত চিহ্নিতকরণে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রাগকেও অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। তবে প্রতিনিয়ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলেছেন তিন লক্ষাধিক মানুষ। তাঁদের মধ্যে সংকটজনক অবস্থা থেকে ফিরে আসা আক্রান্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ফলে, ভয়ঙ্কর মাত্রা নিতে পারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। যা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে। এক মহামারীর মধ্যে দাঁড়িয়ে নতুন কোনো মহামারী ছড়িয়ে পড়বে না তো? এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে বারবার…

আরও পড়ুন
জীবন্মৃত অবস্থায় কাটত দিন; ১০০ বছর আগের ‘জম্বি’ মহামারীর রহস্য মেটেনি আজও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কমপক্ষে ১০ বছর স্থায়ী হবে মহামারী, করোনার নতুন স্ট্রেন নিয়ে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

Latest News See More