ভিন্ন ধর্মের বিবাহের ক্ষেত্রে পাবলিক নোটিশ বাধ্যতামূলক নয় : এলাহাবাদ হাইকোর্ট

‘লাভ জিহাদ’ – এই মুহূর্তে সারা ভারতে অন্যতম চর্চিত একটি বিষয়। আইন অনুযায়ী যদিও যে কোনো ধর্মের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজের ইচ্ছামতো জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারেন। কিন্তু নানা মৌলবাদী শক্তি আজও সেই অধিকার কেড়ে নিতে চায়। ঠিক এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়েই এক ঐতিহাসিক রায়ের সাক্ষী থাকল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারক বিবেক চৌধুরী জানালেন, ‘স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট -১৯৫৪’-এর আওতায় ভিন্ন ধর্মের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের বিবাহের ক্ষেত্রে ১ মাসের পাবলিক নোটিশ বাধ্যতামূলক নয়। এই পুরনো নিয়ম আসলে মানুষের মৌলিক অধিকারের উপরেই হস্তক্ষেপ করে।

জনৈক সফিয়া সুলতানার দাখিল করা একটি পিটিশনের ভিত্তিতে এই রায় দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সফিয়া একজন হিন্দু যুবককে বিবাহ করতে চেয়েছিল। অবশ্য তার জন্য স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের অনুমোদন থাকলেও সেক্ষেত্রে ১ মাসের নোটিশ পিরিয়ডে যে কেউ বিবাহে আপত্তি জানাতে পারেন। আইনি পদক্ষেপ নিয়ে লাভ না হলেও সামাজিকভাবে তাঁদের হেনস্থার শিকার হতেই হত। তাই সফিয়া শেষ পর্যন্ত ধর্ম পরিবর্তন করে বিবাহ করলেন। কিন্তু তার পরেও সফিয়ার বাবা বিষয়টি মেনে নিলেন না। গৃহবন্দি করা হল সফিয়াকে।

বিচার চলাকালীন প্রত্যেকের জবানবন্দিতে বোঝা যায়, সফিয়া আসলে ধর্ম পরিবর্তন করতে চাননি। কিন্তু সামাজিক জটিলতা এড়াতে এটাকেই সহজ পথ মনে করেছিলেন। উঠে আসে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের জটিলতার কথাও। বিচারক বিবেক চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আজ থেকে ১৫০ বছর আগে যে নিয়ম প্রাসঙ্গিক ছিল, আজ আর তা নয়। ২০১৭ সালের প্রাইভেসি আইন এবং ২০১৮ সালের আধার সংক্রান্ত মামলার উদাহরণও দিয়েছেন। অবশ্য পাশাপাশি জানিয়েছেন, কেউ চাইলে নিজেদের বিবাহের ইচ্ছার কথা পাবলিক ডিসপ্লে করতেই পারেন।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের সমাজকর্মী আসিফ ইকবালও। যদিও তাঁর কথায় উঠে এল আশঙ্কার ইঙ্গিতও। বললেন, “এর পর বেশিরভাগ মানুষই চাইবেন না তাঁদের বিবাহের ইচ্ছার কথা পাবলিক ডিসপ্লে করা হোক। কিন্তু ১ মাসের দীর্ঘ নোটিশ পিরিয়ডে তথ্য বের করে নেওয়া মৌলবাদী দুষ্কৃতিদের পক্ষে অসম্ভব নয়। তাই সমস্যা সম্পূর্ণ সমাধান হল না।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “এটা তো শুধুই সিঙ্গল বেঞ্চের রায়। এরপর মামলা ডিভিসন বেঞ্চে যাবে। শেষ পর্যন্ত নোটিশ না এলে নিশ্চিন্ত হওয়ার অবকাশ নেই।” বস্তুত, এর আগে হিমাচলপ্রদেশ হাইকোর্ট একই ধরণের রায় দিলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। তবে ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার ক্ষেত্রে বিচারক বিবেক চৌধুরীর এই রায়ের তাৎপর্য অস্বীকার করার অবকাশ নেই।

আরও পড়ুন
ভিনধর্মের সম্পর্কের ওপর আঘাত দেশজুড়ে, ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছেন আসিফ ইকবাল

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘লাভ জিহাদ’ বিরোধী বিল মধ্যপ্রদেশে, ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর কুঠারাঘাত?

Latest News See More