২৩০টি পঞ্চায়েত এবং ৭টি পুরসভা নিয়ে গঠিত বিহারের (Bihar) অন্যতম বৃহৎ জেলা পূর্ণিয়া। আর সেই জেলাই হয়ে উঠতে চেয়েছিল এমন এক জেলা, যেখানে প্রতিটা পঞ্চায়েতেই নিজস্ব পাঠাগার রয়েছে। আর তার জন্য লক্ষমাত্রা ছিল ২ বছরেরও কম সময়। চলতি বছর ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনের মধ্যেই ২৩০টি পঞ্চায়েতে পাঠাগার তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। কিন্তু বই প্রদান কর্মসূচির (Book Donation) মাধ্যমে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখাল প্রশাসন। জেলার সাধারণ মানুষ নিজেদের সংগ্রহ থেকেই বই তুলে দিয়েছেন পাঠাগার তৈরির কাজে। গতকালই জেলা কালেক্টর রাহুল কুমার জানিয়েছেন, ২৩০টি পঞ্চায়েতেই পাঠাগার তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
সারা দেশের মধ্যে বিহারে সাক্ষরতার হার বেশ কম। আর পূর্ণিয়া জেলায় আরও কম। এখানে মাত্র ৫২ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ অক্ষরপরিচয়যুক্ত। তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ যথেষ্ট বেশি। কিন্তু আগ্রহ থাকলেও উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। ফলে ক্রমশ ভিড় বাড়ছিল শহরের উপরে। এই সমস্ত কারণেই গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করে তোলার প্রয়োজন বুঝেছিল প্রশাসন। আর তাই ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের ঠিক প্রাকমুহূর্তে জেলার প্রতিটা পঞ্চায়েতে পাঠাগার গড়ে তোলার জন্য বই প্রদান অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু কীভাবে সংগ্রহ করা হবে এত বই? শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছেই হাত পাতে প্রশাসন। আর একে একে সবাই নিজেদের সংগ্রহ থেকে বই দান করতে থাকেন। এর মধ্যেই এসে পড়ে কোভিড অতিমারী। তার মধ্যে এমন একটা উদ্যোগ সফল করা সহজ ছিল না। কিন্তু হাল ছাড়েননি কেউই।
প্রশাসনের চেষ্টায় এবং জেলার অসংখ্য মানুষের সহযোগিতায় আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এই দেড় বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা গিয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার বই। এর মধ্যে পাঠ্যবই এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত বইয়ের সংখ্যাই বেশি। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাহুল কুমার জানিয়েছিলেন, জেলার ১৯০টি পঞ্চায়েতে পাঠাগার তৈরি করা গিয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসের দিন সেই ১৯০টি পাঠাগারের উদ্বোধনও হয়। এর মধ্যেই বাকি সমস্ত পঞ্চায়েতের কাজও শেষ হয়েছে। গান্ধীজয়ন্তীর দিনেই বাকি ৪০টি পাঠাগারের উদ্বোধন হবে। পূর্ণিয়া জেলার কোনো পড়ুয়াকেই আর পড়াশোনার পরিকাঠামোর জন্য শহরে ভিড় জমাতে হবে না। আর সারা ভারতে এমন উদ্যোগ তো এই প্রথম। আগামীদিনে অন্যান্য জেলায় এবং অন্যান্য রাজ্যের কাছেও এই প্রকল্প একটা মডেল হিসাবে থেকে যাবে বলে বিশ্বাস প্রশাসনের।
Powered by Froala Editor