Powered by Froala Editor
রেহাই পাবে না বুলেটপ্রুফ গাড়ি, হেলিকপ্টারও! আধুনিক যুগের 'ব্রহ্মাস্ত্র' জেপার্ড
১/৯
বিজয়নগরের রাজা দেববর্মাকে গুপ্তবিদ্যার পরিচয় দিয়েছিলেন কর্মকার বলরাম। ইতিহাসে নয়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’-তেই রয়েছে এমন কথা। সেখানে বলরাম এমন এক কামান তৈরি করেছিল, যার দৈর্ঘ্য বন্দুকের চেয়ে বেশি নয়। লেখকের কল্পনাও যে মাঝে মাঝে সত্যি হয়ে যায়, এই তার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ। নাহলে সামান্য একটা রাইফেল কি এক গুলিতে হেলিকপ্টার মাটিতে নামিয়ে আনতে পারে? বা গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিতে পারে বুলেটপ্রুফ গাড়িও? এ যেন সেই পৌরাণিক যুগের ব্রহ্মাস্ত্রের আধুনিক সংস্করণ।
২/৯
১৯৯০ সালে হাঙ্গেরির আর্মি অ্যাকাডেমির বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছিলেন অতি শক্তিশালী রাইফেল ‘জেপার্ড জিএম-৬ লিঙ্কস’ (Gepard GM6 Lynx)। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এই অস্ত্র। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, একটি আন্তর্জাতিক শক্তি সম্প্রতি এই অস্ত্র কিনতে শুরু করেছে। তাও একটি বা দুটি নয়, একেবারে ১৫০টি। একটি রাইফেলের দামই যেখানে ৯ হাজার ইউরোর কাছাকাছি, সেখানে এই বিপুল পরিমাণ সামরিক বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়েও তৈরি হচ্ছে জল্পনা।
৩/৯
খাতায় কলমে একটি সাধারণ রাইফেল হলেও জেপার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে একমাত্র হাউৎজার কামান। পার্থক্য এই যে, কামানে ব্যবহৃত হয় বারুদের গোলা। আর জেপার্ডের ক্ষেত্রে ছোট্ট গুলিতেই কাজ হাসিল। জেপার্ডে সাধারণত ব্যবহার করা হয় .৫০ ক্যালিবারের গুলি। একসঙ্গে ৫টি কার্তুজ ব্যবহার করা যায় এই রাইফেলে। আর এক একটি গুলির রেঞ্জ ২ কিলোমিটার। প্রতিটা গুলির গতিবেগ সেকেন্ডে ৮৬০ মিটার। শুধু তাই নয়, এক মিনিটের মধ্যে ৪টি কার্তুজ ব্যবহার করে ফেলা যায়। যেখানে একটি বুলেটেই আস্ত হেলিকপ্টারকে মাটিতে নামানো যায়, সেখানে ৪টি কার্তুজ ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের অর্ধেক বাহিনীকেই দমিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে।
৪/৯
জেপার্ড রাইফেলের ওজন সাকুল্যে ১১ কেজি থেকে ১৭ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৩ কেজির কাছাকাছি হয় ওজন। সাধারণ রাইফেলের তুলনায় একটু ভারী হলেও অনায়াসে এই রাইফেল নিয়ে প্যারাস্যুটে চড়ে বসা যায়। আর এইভাবে একবার শত্রুপক্ষের শিবিরে গিয়ে পড়তে পারলেই সব খেলা শেষ। একটি গোটা বাহিনীর পক্ষে অসম্ভব কাজও একজন মাত্র সৈনিক করে ফেলতে পারেন। যদি সঙ্গে থাকে জেপার্ড ব্রহ্মাস্ত্র।
৫/৯
তবে শুনতে অবাক লাগতে পারে, আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর কাছে কিন্তু এই অস্ত্র একেবারেই নতুন নয়। ২০১১ সালে ভারতের স্পেশাল ফোর্সের জন্য কেনা হয় জেপার্ড রাইফেল। তবে এখনও পর্যন্ত তা কোনো অপারেশনে ব্যবহার করা হয়েছে বলা জানা নেই। শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর আরও ৫টি দেশের সেনাবাহিনী এই রাইফেল ব্যবহার করে। এগুলি হল – কানাডা, তুরস্ক, রোমানিয়া, মালির পিপলস মুভমেন্ট বাহিনী এবং অবশ্যই নির্মাতা দেশ হাঙ্গেরি।
৬/৯
এবার এই তালিকাতেই যুক্ত হল নতুন একটি নাম। গ্রেট ব্রিটেন। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ব্রিটেনের তিনটি বাহিনীর জন্য মোট ১৫০টি জেপার্ড রাইফেলের বরাত দেওয়া হয়েছে। এগুলি যথাক্রমে স্পেশাল এয়ার সার্ভিস, স্পেশাল বোট সার্ভিস এবং স্পেশাল রেকনাইস্যান্স রেজিমেন্ট। কিন্তু কেন এই তিন বাহিনীর জন্য কেনা হল জেপার্ড রাইফেল? এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে আফগান যোগের কথাও।
৭/৯
ন্যাটোর সদস্য হিসাবে আফগানিস্তানে ছিল এই তিনটি বাহিনীই। আর সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানানো হয়েছে, ন্যাটো আফগানিস্তান ছাড়লেও ব্রিটিশ বাহিনীর ৪০ জন সদস্য এখনও থেকে গিয়েছেন। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়েছেন তাঁরা। তাহলে কি যুদ্ধের এখনও শেষ হয়নি? আর এবার সেই যুদ্ধে বাজিমাত করতেই কি ব্রিটেনের জেপার্ড কেনা? উঠছে এমনই নানা সম্ভাবনার কথা।
৮/৯
বিগত যুদ্ধের সময় কাবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসবাদী হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩ জন মার্কিন নৌসেনা। ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে বরাবরই মার্কিন নৌসেনা বাহিনীর সুসম্পর্ক ছিল। বহু যুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করেছে তারা। এমনকি ব্রিটিশ সেনাদের চিকিৎসা, খাবার সরবরাহের মতো নানা বিষয়ে সাহায্য করেছে মার্কিন নৌবাহিনী। মিত্র বাহিনীর উপর এই হামলার প্রতিশোধ নিতে চায় ব্রিটেন, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
৯/৯
সূত্রের খবর, জঙ্গি বাহিনী আইএসকে-র বিরুদ্ধে এই অভিযানে ব্রিটেনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত খোদ তালিবান সরকারও। তবে অনেকের মতেই, শুধুই আফগানিস্তান পাখির চোখ নয়। বরং পাশাপাশি সিরিয়া এবং ইরাক অভিযানেও অস্ত্রগুলি ব্যবহারের চিন্তা করছে ব্রিটেন। জেপার্ডের গুণেই এবার কি তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে ব্রিটেন? আন্তর্জাতিক স্তরে ইতিমধ্যে কপালে ভাঁজ পড়েছে অনেকেরই।