পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চোখে ব্যাপারটা ছিল বেশ সন্দেহজনক। মানুষটি যখন আন্দামানে ঘুরতে এসেছিলেন তখন সঙ্গে এত বড় ব্যাগ ছিল না। কী আছে তার মধ্যে? ব্যাগ খুলতেই দেখা গেল অসংখ্য ফেলে দেওয়া নারকেল মালা ব্যাগে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু কেন? এই উত্তর না পেলে তাঁকে বিমানে উঠতে দেওয়া যাবে না, স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আধিকারিকরা। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা বিজয়ানন্দ শাম্বেকারের পক্ষে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা ছিল বেশ কঠিন। তবে শেষ পর্যন্ত আলিবাগ আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীর ছবি দেখিয়ে শেষে বিষয়টা কিছুটা বোঝাতে পারলেন। অবশেষে ফিরে আসার অনুমতি পেলেন তিনি।
অবশ্য এসব ঘটনা নিয়ে সেভাবে মাথা ঘামাতে রাজি নন বিজয়ানন্দ। ছোট থেকেই তাঁর এই অদ্ভুত শখ নিয়ে অনেকেই হাসিঠাট্টা করেছেন। বন্ধুরা তো বটেই, এমনকি পরিবারের লোকজনের কাছেও বিষয়টা ছিল নিতান্ত হাস্যকর। কিন্তু তার পরেও নিজের শখ ছেড়ে দেননি বিজয়ানন্দ। যেখানেই যান, তিনি খুঁজে নেন কোথায় নারকেলের মালা, ছোবড়া বা নারকেল পাতা পড়ে আছে। আর সেইসব সংগ্রহ করে শুরু করেন নিজের শিল্পকর্ম। কখনও সাধারণ পুতুল। আবার কখনও সেই নারকেল গাছের ফেলে দেওয়া অংশ দিয়েই তৈরি করেন মোটরগাড়ি, মোটরসাইকেল, পুরনো ট্রাকটর অথবা অটরিক্সা কিংবা হাতে টানা রিক্সা। আবার কখনও সেই নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি করেন কোনো সাপ বা এমন কোনো প্রাণীর প্রতিকৃতি। প্রতিটা সৃষ্টিই নিখুঁত শিল্পকর্ম।
বিগত চল্লিশ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন বিজয়ানন্দ। যখন শুরু করেন, তখন স্কুলের ছাত্র ছিলেন। আর এখন সকালে যান একটি বেসরকারি সংস্থায়। সারাদিন অফিসে কাজ করে বাড়ি ফিরে বসে পড়েন নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে। সারারাত কেটে যায়। ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে নিয়ে আবার দিন শুরু হয়। একে একে ৪০০টির বেশি শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে ২০১৭ সালে আলিবাগ শহরে একটি প্রদর্শনীতেও তাঁর হাতের কাজ প্রদর্শিত হয়। অবশ্য বিজায়নন্দ মনে করেন, প্লাস্টিকের খেলনার পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব এই সমস্ত খেলনা জনপ্রিয় না হলে তাঁর কাজ সফল হবে না। তিনি শুধু শিল্পী হিসাবে পরিচিতি পেতে চান না। বরং তাঁর উদ্দেশ্য প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা।
Powered by Froala Editor