এক পুরনো অভিজাত পরিবারের সব সম্পত্তি নিলামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল। সেখানেই একটি হাতে আঁকা স্কেচ দেখে পছন্দ হয়ে যায় ম্যাসাচুসেট শহরের এক ব্যক্তির। নামমাত্র দামে কিনে আনেন সেই ছবিটি। কিন্তু এই ছবিই যে আসলে একটি বিখ্যাত মাস্টারপিসের আসল স্কেচ, তা তিনি জানতেন না। মামুলি একটি স্কেচ ভেবেই কিনেছিলেন। আর তার দাম পড়েছিল মাত্র ৩০ ডলার। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পেরেছেন, ৫০০ বছর আগে এই স্কেচটি এঁকেছিলেন পৃথিবীবিখ্যাত শিল্পী অ্যালব্রেক্ট ড্যুরার (Albrecht Durer)। আর তার দাম ৫০ মিলিয়ন ডলারের কম নয়।
২০১৬ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেট শহরে প্রয়াত আর্কিটেক্ট জাঁ-পল কার্লহিয়ানের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তার মধ্যেই ছিল এই ছবিটি। বংশপরম্পরায় এটি থেকে গিয়েছিল কার্লহিয়ান পরিবারের কাছে। কবে কে সংগ্রহ করেছিলেন, জানতেন না কেউই। কার্লহিয়ান পরিবারেরও কেউ ভাবতে পারেননি, এর কোনো ঐতিহাসিক মূল্য আছে। হ্যাঁ, ড্যুরারের মেরি-যিশুর ছবির সঙ্গে এই ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ করেছিলেন। একইভাবে মেরির কোলে বসে খেলা করছেন শিশু যিশু। তবে পৃথিবীর সব বিখ্যাত শিল্পকর্মেরই এমন অসংখ্য অনুকৃতি পাওয়া যায়। এটিও তেমনই একটি অনুকৃতি বলে মনে করেছিলেন কার্লহিয়ান পরিবারের সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তিও সেই ছবিটি কিনেছিলেন একটি অনুকৃতি মনে করেই।
তবে বাড়িতে এসে ছবিটা ভালো করে দেখতে গিয়েই খটকা লাগে ওই ভদ্রলোকের। ছবির নিচে ‘এ ডি’ লেখা মনোগ্রামটি তাঁর চেনা। ড্যুরারের অনেক আসল ছবিতে এই একই মনোগ্রাম দেখেছেন তিনি। আর সন্দেহ হতেই তিনি যোগাযোগ করেছিলেন ক্লিফোর্ড স্ক্রোরার নামে এক চিত্র বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তিনি পরীক্ষা করে জানান, হয় ছবিটি সত্যিই ড্যুরারের আঁকা। নাহলে এটি এমন এক জুয়াচুরি, যা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ জুয়াচুরি হিসাবে স্বীকৃতি পেতে পারে। ড্যুরারের সই-তে কোনো পার্থক্য নেই। এমনকি তিনি যে ধরনের লিনেন কাগজে স্কেচ আঁকতেন, সেই একই ওয়াটারমার্কযুক্ত কাগজেই আঁকা এই ছবিটি। এরপর অ্যালবার্টিনা মিউজিয়ামের ড্যুরার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টফার মেৎজগার এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিউরিয়েটর গিউলিয়া বারট্রামও জানিয়েছেন স্কেচটি ড্যুরারেরই আঁকা। এই ছবিটি ড্যুরার এঁকেছিলেন ১৫০৩ সালের আশেপাশে। আর স্কেচটির বাজারদর ৫০ মিলিয়ন ডলারের কম হতেই পারে না। মাত্র ৩০ ডলার দিয়ে কেনা একটি স্কেচের প্রকৃত দাম সত্যিই অবাক করার মতো।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শিল্পীদের তুলিতে পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রদর্শনী মার্কিন রেস্তোরাঁয়