সকাল সকাল উঠে ব্যাগ গুছিয়ে কলকাতা থেকে উঠে পড়লেন বাসে। তারপর সোজা পৌঁছে গেলেন লন্ডন। কোনো প্লেন, জাহাজ নয়; স্রেফ একটা বাসে করেই চলে যাওয়া বিলেতে— ব্যাপারটা খানিক অদ্ভুত লাগছে না! অবশ্য একটা সময় এই অদ্ভুত ব্যাপারটাই ঘটত। কলকাতা আর লন্ডনকে মিলিয়ে দিয়েছিল একটি বাস। শুধু এই দুটো শহরকেই নয়, মিলিয়ে দিয়েছিল আরও বেশ কয়েকটি দেশকেও। এমনই জাদু ছিল ‘অ্যালবার্ট’-এর…
বেশ কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে ‘অ্যালবার্ট’ বাসটির ছবি। কখনও সে যাত্রী তুলছে, কখনও শহরের মধ্যেই খোলা রোদে দাঁড়িয়ে আছে। একটা সময় পৃথিবীর সবথেকে লম্বা বাস রুটের মালিক ছিল সে। এটা যে সময়ের কথা, তখনও ক্যালকাটা ‘কলকাতা’ হয়নি। সালটা ১৯৬৮। অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট নামের এক ব্রিটিশ পর্যটক সিডনি থেকে নিজের শহর লন্ডনে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। তার জন্য ঠিক করলেন একটি রোমাঞ্চকর জার্নি। একটা মনোরম, সুন্দর ডাবল ডেকার বাস নিলেন; সঙ্গে জুটল আরও ১৩ জন। সবাই মিলে ’৬৮-এর অক্টোবরে সিডনি থেকে পাড়ি দিলেন লন্ডনের দিকে। কলকাতায় পৌঁছনোর আগে ট্রেন এবং জাহাজে করেই পাড়ি দিয়েছিলেন। কলকাতা থেকে শুরু হয়েছিল টানা রাস্তা। তৈরি হল পৃথিবীর সবথেকে লম্বা বাস রুট। জন্ম হল ‘অ্যালবার্ট’-এর…
সত্তরের দশকে রীতিমতো বিখ্যাত ছিল এই বাসটি। ভেতরে ফাইভ স্টার বন্দোবস্ত; স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশি যাত্রী নেওয়া যেত না। আর অনেকের সামর্থ্যও ছিল না। কলকাতা থেকে লন্ডনে যাওয়ার সিঙ্গল ট্রিপের ভাড়া ছিল ৮৫ পাউন্ড, যা তখনকার হিসেবেও বেশ দামি ছিল। কিন্তু যারা চড়তেন, তাঁরা এক অদ্ভুত অ্যাডভেঞ্চারের সাক্ষী থাকতেন। মোট ১৫০টি সীমান্ত পেরোত অ্যালবার্ট, তবে সমস্যা হয়নি কোনো। মূলত কলকাতা আর লন্ডনের মধ্যে হলেও, চারটে ট্রিপ করা হয় সিডনি থেকেও। শেষ ট্রিপটি ছিল ১৯৭৬ সালে। যাত্রা থামলেও, ইতিহাস কি আর সহজে ভোলা যায়!
Powered by Froala Editor