“আমাদের বসন্ত উৎসবের মন্ত্র তো ‘খোল দ্বার খোল’। চারিদিক থেকে বন্ধ করে রেখে তার উদযাপন সম্ভব নয়।” বলছিলেন আলাপিনী মহিলা সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদিকা মনীষা ব্যানার্জি। তাঁর মতে, “করোনা পরিস্থিতিতে একবছর অনুষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবদিক বন্ধ করে যেভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন হল তা একেবারেই বিশ্বভারতীসুলভ নয়।”
তিনমাস আগে এই ‘আলাপিনী মহিলা সমিতি’-কে নিয়েই বিতর্ক শুরু হয় বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরে। শতবর্ষপ্রাচীন এই সংগঠনটি এতদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবেই বিবেচিত হত। কিন্তু উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আকস্মিক নির্দেশে ঘরছাড়া হলেন সংগঠনের প্রত্যেকেই। মাসে মাত্র দুদিন বিকালে আনন্দ পাঠশালার একটি ঘরে মিলিত হতেন সদস্যারা। আর এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল ইন্দিরা দেবীর সময়েই। বর্তমান উপাচার্যের একটি নির্দেশে সেই ইতিহাসে ছেদ পড়ল। কিন্তু ইতিহাস যে বেঁচে থাকে মানুষের মধ্যেই। বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে একটি পৃথক বসন্ত উৎসবেরই আয়োজন করে ফেললেন সংগঠনের সদস্যারা।
“প্রতি মাসের ৩০ তারিখ আমরা সভার অধিবেশনে বসি। এবারেও তেমনই অধিবেশনের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে কিছুদিন আগেই ঘটে যাওয়া বসন্ত উৎসব নিয়ে সবার মধ্যেই ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই রাস্তার মধ্যেই আনুষ্ঠিত হয়ে গেল আমাদের বসন্ত উৎসব।” এভাবেই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির কথা জানালেন মনীষা ব্যানার্জি। তাঁর কথায়, “আমাদের প্রত্যেকেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বসন্তের ধারণা আমাদের সকলের মনের মধ্যেই রয়েছে। তাই এই বয়সেও পথচলতি মানুষের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারি নিজেদের।
অনুষ্ঠানে সত্তরোর্ধ্ব সদস্যা নৃত্যপরিবেশন করলেন। পলাশ ছড়িয়ে সদস্যারা হাঁটলেন লাল মাটির পথ দিয়ে। আসলে তিনমাস ধরে তো পথই তাঁদের ঠিকানা। আনন্দ পাঠশালা থেকে উৎখাত হয়ে এখন রাস্তাতেই বসে অধিবেশন। তবে শুধু নিজেদের ঠিকানা হারিয়েছেন বলেই নয়, বিশ্বভারতীর ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তিত প্রত্যেকে। মনীষা ব্যানার্জি বলছেন, “নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে শুধু আমাদের আবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে হারিয়ে যেতে দেবেন না।”
আরও পড়ুন
শান্তিনিকেতনে বাংলার হারিয়ে যাওয়া মিষ্টি ফিরিয়ে আনছেন অমর্ত্য সেনের ছাত্র
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সলিল চৌধুরীর গান গাইলে থাকা যাবে না শান্তিনিকেতনে, রেকর্ডিং করেও পিছিয়ে এলেন কণিকা