আজ থেকে ১০০ বছর পিছিয়ে গেলে এই দেশটা একটু অন্যরকম লাগে। নিজের গ্রাম ছেড়ে দূরে যাওয়া তখন রীতিমতো একটা ঘটনা। আর সেই সময় যেন কোনো দুর্ভাগ্য না আসে, এই প্রার্থনা করতেন সকলে। সৌভাগ্যের সূচক ছিল নানারকম। আর তার মধ্যে একটি অবশ্যই রাম-সীতা মুদ্রা। সোনার বা রূপোর মুদ্রার উপর মিনা করে আঁকা রাম এবং সীতার ছবি। তবে এই মুদ্রা বাণিজ্যিক লেনদেনে ব্যবহার হত না। সময়টা আরও অনেকটা পিছিয়ে নিয়ে গেলে কিন্তু দেখতে পাবো, সরকারি লেনদেনেও ব্যবহার করা হচ্ছে রাম-সীতা মুদ্রা। আর ভাবতে অবাক লাগে, সেই সময়টা একজন তথাকথিত মুসলমান শাসকের। যদিও তিনি উদারধর্মনীতির কথাই বলেছেন বারবার। তিনি আর কেউ নন, সম্রাট আকবর।
রাষ্ট্র পরিচালনার সময় অনেক ক্ষেত্রেই পূর্বপুরুষদের পথে হাঁটেননি আকবর। তিনি এই দেশকে দেখতে চেয়েছিলেন নিজের দৃষ্টিতে। মোঘল শাসনের শুরুতে সরকারিভাবে যে মুদ্রা চালু ছিল, তার নাম শাহরুখি মুদ্রা। এর একদিকে লেখা থাকত কোরানের দুই লাইনের সারাংশ, যাকে কলেমা বলা হয়। অন্যদিকে চারজন নবির নাম। বলা বাহুল্য, এই মুদ্রা আপন করে নিতে পারেননি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু এবং অমুসলিম মানুষ। আকবরের শাসনের শুরুতেও এই শাহরুখি মুদ্রাই প্রচলিত ছিল।
তবে ১৫৮৪ সাল, আকবরের জীবনে তো বটেই, ভারতের ইতিহাসেও এক সন্ধিক্ষণ। সেইবছরই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ‘দিন-ই-ইলাহি’ ধর্মের প্রবর্তন করেন আকবর। এদেশের মানুষের মতো করে ব্যাখ্যা করেন ধর্মনিরপেক্ষতাকে। আর তারপর থেকেই শাহরুখি মুদ্রার প্রচলন কমতে থাকে। মুদ্রার মধ্যেও ধর্মনিরপেক্ষতার ছাপ লাগে। আর আকবরের শাসনের শেষ বছর মিনা করা হল আরও একটি নতুন মুদ্রা। এই মুদ্রাই রাম-সীতা মুদ্রা। মিনা করা মুদ্রার একদিকে তীর-ধনুক হাতে রাম। সঙ্গে হাতে পদ্মফুল নিয়ে সীতা। আর অন্যদিকে লেখা প্রকাশকাল। ইলাহি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সন ৫০। অর্থাৎ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে ১৬০৫ অথবা ১৬০৬ সাল।
আকবরের পর আর কোনো শাসকই রাম-সীতা মুদ্রা চালু করার চেষ্টা করেননি। কিন্তু ভারতের জনজীবনে গভীর ছাপ রেখে গিয়েছিল এই মুদ্রা। প্রকৃত আকবরের সময়কার মুদ্রা খুব কমই আছে। এখনও অবধি জানা তথ্য অনুসারে সেই সময়ের একটি স্বর্ণমুদ্রা এবং দুটি রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া যায়। কিন্তু আজও বহু মানুষের ঘরে সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে আছে রাম-সীতা মুদ্রা। হয়তো এভাবেই ইতিহাস বেঁচে থাকে।
তথ্যসূত্র - Akbar’s Ode to Ram & Sita, Krutika Haraniya, Live History India
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চম্বলের ডাকাতদের খপ্পরে পড়েছিলেন হিউয়েন সাং; খুন হন আকবরের জীবনীকার আবুল ফজলও