ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ জেলায় বেড়ে ওঠা তাঁর। কোলবেল্টে অবস্থিত বারকাগাঁও শহরে। ফলত, পরিবারের কেউ কয়লাখনিতে কাজ না করলেও, খননকার্যের ইতিবৃত্তান্ত আর কর্মীদের জীবন বেশ সামনে থেকেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি। তবে আশ্চর্যের বিষয়, কোনোদিনই কোনো মহিলা কর্মীকে ভূগর্ভস্থ খনিতে কাজ করতে দেখেননি তিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভালোই বুঝেছিলেন, এ কেবলমাত্র সমাজের প্রথাগত চিন্তাধারার বেড়াজালমাত্র। সেই বেড়াজাল ভেঙেই বেরিয়ে এসে এবার ইতিহাস তৈরি করলেন ঝাড়খণ্ডের মেয়ে আকাঙ্ক্ষা কুমারী। ভূগর্ভস্থ কয়লাখনির প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে স্থাপন করলেন নতুন মাইল ফলক।
সম্প্রতি, সেন্ট্রাল কোলফিল্ডস লিমিটেড (সিসিএল)-এর তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় আকাঙ্ক্ষার এই সাফল্য কথা। তবে নিজের জেলা নয়, বরং ঝাড়খণ্ডের উত্তর করণপুরা এলাকার চুরি খনিতে নিযুক্ত হয়েছেন আকাঙ্খা। গত, ২৫ আগস্টই হাতে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের চিঠি পেয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের তরুণী। এক সপ্তাহের অপেক্ষার পর গতকাল তিনি যোগ দেন কর্মক্ষেত্রে।
খননক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যতা তাঁর নজরে পড়েছিল একেবারে ছোটোবেলাতেই। আর সেই ঘটনাই যেন তাঁকে আরও বেশি করে আগ্রহ জুগিয়েছিল খনন প্রকৌশলের সম্পর্কে। যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা পাশ করার পরই আকাঙ্ক্ষা ধানবাদের বিআইটি সিন্ধ্রিতে ভর্তি হন খনি প্রকৌশল বিভাগে। ২০১৮ সালে স্নাতকতা শেষ করার পর রাজস্থানের হিন্দুস্তান জিঙ্ক লিমিটেডের বালারিয়া খনিতে যোগ দেন আকাঙ্খা। কোল ইন্ডিয়ার চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন তিনি। তবে রাজস্থানে খনির বাইরে থেকেই সমস্ত কাজের তদারকি করতে হত। এবার কোল ইন্ডিয়ায় আরও এক ধাপ এগিয়ে ভারতের প্রথম মহিলা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড মাইন ইঞ্জিনিয়ার’-এর মর্যাদা পেলেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক মজুর থেকে শুরু করে অফিসার, চিকিৎসক, দ্বাররক্ষী— বিভিন্ন পদেই মহিলাকর্মীদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে কোল ইন্ডিয়ায়। যা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। তবে এতদিন ভূগর্ভস্থ ইঞ্জিনিয়ারের আসন অধরাই ছিল মহিলাদের ক্ষেত্রে। সেই কাচের দেওয়াল ভেঙেই নতুন যুগের সূচনা হল আকাঙ্ক্ষার হাত ধরে। আগামীদিনে যা শুধু মহিলাদের এই পেশায় আসতে অনুপ্রেরণাই যোগাবে না, বৈষম্যহীন কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতেও সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন
মাদুরশিল্পের হাত ধরেই জাতীয় পুরস্কারজয়ী পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই মহিলা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রাণহানি, অসম্পূর্ণ পড়াশোনা, বন্দিত্ব— তালিবান-জমানায় মহিলাদের ভবিতব্য?