“দিন সাতেক আগে যখন প্রথম আগুন লাগে, তখনও বুঝতে পারিনি দেখতে দেখতে পরিস্থিতি এমন ভয়ানক হয়ে যাবে। শীতকালে প্রায় প্রত্যেক বছরই আগুন লাগে। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। গতকাল দেখলাম সারা অযোধ্যা পাহাড় জ্বলছে। পুরুলিয়া ছাড়িয়ে বাঁকুড়া পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে আগুন।” বলছিলেন পরিবেশকর্মী, সাইক্লিস্ট অক্ষয় ভগত। এক সপ্তাহ ধরে অযোধ্যা পাহাড়ে আগুন একটু একটু করে ছড়িয়েছে, ঠিক তখন যখন নির্বাচনী বাজারে আগুন ঝরছে। তবে শেষ পর্যন্ত জঙ্গলকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন স্থানীয় মানুষরাই। আর দুদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের শেষে আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেও এসেছে।
“এই আগুন প্রকৃতির নিয়মে লাগেনি। প্রত্যেকেই জানেন এর পিছনে এক শ্রেণীর মানুষের হাত আছে।” মনে করছেন আরেক পরিবেশকর্মী তরুন মাহাতো। প্রশাসন সবকিছু জেনেও কিছু করছেন না বলেও অভিযোগ তুলেছেন দুজনে। অক্ষয় ভগত জানালেন, “কাল জানা যায় অযোধ্যা পাহাড়ে ৭০টি স্পটে আগুন লেগেছে। এই কথা শুনে আমরা পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া জেলার সমস্ত পরিবেশকর্মীরা একসঙ্গে আলোচনায় বসি। এরপর আমরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দিই। বয়স্ক মানুষরা ঝাঁপিয়ে পড়েন সচেতনতা তৈরির কাজে। আর এক একদিনে আমরা ৫-৬টি স্পটের আগুন নিভিয়ে ফিরছি।” দুদিনের চেষ্টার শেষে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত।
শীতকাল, তাই পুরুলিয়ার কোনো নদীতেই জল নেই। বনবিভাগের উপস্থিতিও নামমাত্র। তরুন মাহাতো জানালেন, “আমরা শুকনো কাঠ, পাতা সরিয়ে একটা ফায়ার-লাইন তৈরি করছি। তারপর আগুন আর নতুন করে ছড়ানোর জায়গা না পেয়ে একটু একটু করে নিভে যাচ্ছে। এভাবেই একটা একটা করে স্পটের আগুন নেভানো হচ্ছে।” সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের শেষে স্বেচ্ছাসেবীরা ফিরছেন এক বুক ধোঁয়া নিয়ে। তা না হলে যে প্রকৃতির ফুসফুসটাই নষ্ট হয়ে যাবে। অক্ষয় ভগত বলছেন, “আমরা জঙ্গলের বাইরের দিকের প্রায় সবটাই নিভিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আরও গভীরে প্রবেশ করার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। আমরা তাই সরকারি আধিকারিকদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। সাধারণ মানুষ নিজেরাই এতটা কাজ করে ফেললে ওঁরা পারবেন না?”
সারা পৃথিবী জুড়েই একের পর এক জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনায় প্রশ্ন জাগছে ভবিষ্যৎ নিয়েও। সামান্য মুনাফার লোভে প্রকৃতিকে নষ্ট করে ফেলছে মানুষ। আর প্রশাসন সব জেনেও নিশ্চুপ। মূলত বে-আইনি কাঠ পাচারকারীদের জন্যই প্রতি বছর শীতকালে অযোধ্যা পাহাড়ে আগুন লাগছে বলেই মনে করছেন পুরুলিয়ার স্থানীয় বাসীন্দা সৌরভ মাহান্তী। কিন্তু এভাবে কতদিন জঙ্গলমহলকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন তাঁরা, জানেন না কেউই।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার - দুর্গাদাস মাহান্তী
Powered by Froala Editor