করোনা পরিস্থিতিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটেছে একাধিক বাণিজ্যিক সংস্থা। এবার সেই তালিকায় নাম উঠল সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা এয়ার-ইন্ডিয়ার। সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি মারফত ৪৮ জন পাইলটকে রাতারাতি কাজ থেকে অব্যহতি নিতে বলা হয়। আর এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে তৈরি হয়েছে আইনি জটিলতাও।
এয়ার-ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই ৪৮ জন পাইলট ২০১৯ সালেই নিজেদের রেজিগনেশন লেটার জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইন্ডিয়ান কমার্সিয়াল পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ৬ মাস সময়ের মধ্যেই সেই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেছেন প্রত্যেকেই। এমনকি এয়ার-ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও প্রত্যাহারের কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। অতএব সেক্ষেত্রে পদত্যাগ মঞ্জুর করার বিষয়টি একেবারেই বে-আইনি একটি সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে ইউনিয়ন।
যদিও এয়ার-ইন্ডিয়ার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতির ধাক্কা সামালতেই পদত্যাগের বিষয়টি আগে থেকে মঞ্জুর করে কর্তৃপক্ষ। এবং তাঁদের দাবি সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী রায়ে এই অধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ববর্তী একটি বিশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে এই বিষয়টি এক করে দেখা আদৌ উচিত কিনা, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে।
পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে, ১৪ তারিখ রাতেও বেশ কিছু পাইলট বিমান চালানোর দায়িত্ব পেয়েছেন। অথচ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ১৩ আগস্ট থেকে তাঁদের কাজে অব্যহতি দেওয়া হল। সেক্ষেত্রে ১৪ তারিখ তাঁদের হাতেই আবার বিমান পরিচালনার দায়িত্ব কীভাবে তুলে দিতে পারে কর্তৃপক্ষ? পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে পাইলটদের আবার কাজে বহাল করার দাবি জানিয়ে এয়ার-ইন্ডিয়া চেয়ারম্যান রাজীব বনসলের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইন্ডিয়ান কমার্সিয়াল পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন।
রাজীব বনসলের কাছে দাবিপত্র পাঠানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপও দাবি করেছে ইউনিয়ন। এমনকি এই দাবি নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন বলেও জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পাইলট নিজেদের উদ্যোগেই আদালতে হাজির হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে একটানা বেশ কিছু মাস বেতন বন্ধ থাকায় পদত্যাগের কথা ভেবেছিলেন এয়ারবাস-৩২০ বিমানের এই পাইলটরা। কিন্তু তারপর আবার সব স্বাভাবিক হওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তাঁরা। সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী যে কেউ ৬ মাসের মধ্যে নিজের পদত্যাগপত্র বাতিল করতে পারেন। এই ৪৮ জনের ক্ষেত্রেও পদত্যাগ বাতিলের বিষয়টি মঞ্জুর করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার মধ্যেই এই করোনা পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ কীভাবে এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, প্রশ্ন উঠছে তাই নিয়ে। সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাতেই কর্ম-সুরক্ষার বিষয়টি অবহেলিত হলে সাধারণ মানুষের অবস্থা যে চরমে উঠবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
Powered by Froala Editor