হিম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। সহজ কথায় এইচআইভি। ১৯৮১ সালে প্রথম গবেষকদের নজরে এসেছিল প্রাণঘাতী এই মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব। তারপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৪ দশক। কিন্তু এখনও এইডসের (AIDS) স্থায়ী সমাধান নেই মানবসভ্যতার হাতে। তবে সেই সুদিন আসতে আর দেরি নেই খুব বেশি। ক্রিসপার জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetical Engineering) প্রযুক্তির মাধ্যমেই এবার এইচআইভি (HIV) নিরাময়ের দিশা দেখাল মার্কিন সংস্থা এক্সিসন বায়োথেরাপিউটিকস। এবার তাঁদের তৈরি ওষুধের ক্লিনিকাল টায়াল (Clinical Trial) শুরু হতে চলেছে মানুষের ওপর। সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানাল সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি।
এক্সিসনের উদ্ভাবিত ইবিটি-১০১ থেরাপিটির গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ক্রিসপার (CRISPR Technology) জিন এডিটিং প্রযুক্তির জনক ডঃ কামেল খালিলি। তবে এই বিশেষ প্রযুক্তি মানবদেহ থেকে এইডস বা এইচআইভি ভাইরাসকে নির্মূল করে না। বরং, এই পদ্ধতিতে জিন এডিটিং-এর মাধ্যমে বাধা দেওয়া হয় ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির প্রক্রিয়াকে।
ইতিমধ্যেই মানব কোষ, ইঁদুর এবং অন্যান্য প্রাণীর ওপর এই বিশেষ থেরাপির প্রয়োগে আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছেন গবেষকরা। এবার সেই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই মানবদেহে এই থেরাপির ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করছেন তাঁরা। মূলত, যে সমস্ত আশঙ্কাজনক এইডস রোগীদের ওপরেই প্রয়োগ করা হবে এই বিশেষ থেরাপি। বিজ্ঞানীদের অভিমত, প্রোভাইরাল ডিএনএ-র অপসারণের ফলে আগামীদিনে আর আজীবন মেডিকেশনের প্রয়োজন পড়বে না।
“এইচআইভি-১ ও এইচআইভি-২— এই দুটি ভাইরাসের জন্যই আমাদের হাতে এখন বেশ কিছু উন্নত ওষুধ রয়েছে। এবং সেগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক কম। এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের এইডস ডেভেলপ না করে গেলে, সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তুলতে পারে এই ওষুধগুলি। কিন্তু এইডস ডেভেলপ করে গেলে বা ভাইরাল লোড বেড়ে গেলে যে পরিমাণ ওষুধ ব্যবহার করতে হয়, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মূল উদ্দেশ্যেই হল ভাইরাল লোডটা কমিয়ে আনা। এবং সেটা সম্ভব হলে বাজারচলতি ওষুধগুলির মাধ্যমেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে এইডস রোগীদের”, জানালেন টাকি রুরাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ তমোজিৎ গোস্বামী।
আরও পড়ুন
মোৎজার্টের সুরেই এপিলেপ্সির চিকিৎসা, অবাক করা আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের
কিন্তু এমন একটা ওষুধ তৈরিতেই কেন চার দশক সময় লেগে গেল বিজ্ঞানীদের? ডঃ গোস্বামীর কথায়, “এইচআইভি ভাইরাসের মধ্যে একটি বিশেষ উৎসেচক রয়েছে। রিভার্স ট্রান্সস্ক্রিপটেড এই এনজাইমটি অত্যন্ত আনপ্রেডিক্টেবল। মানুষের কোন অঙ্গে কীভাবে সেটি আক্রমণ করবে সেটাই বোঝা মুশকিল। ঠিক এই কারণেই, মাত্র দেড় বছরের মধ্যে কোভিডের একগুচ্ছ টিকা আবিষ্কৃত হলেও, এইচআইভির টিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।”
আরও পড়ুন
ক্যানসারকে বারবার রুখেই দু-দশকের শিল্পীজীবন, অর্থাভাবে চিকিৎসাহীন কোয়েল
এক্সিসন বায়োটেকের থেরাপি এই মূলত সমস্যাটিকেই অতিক্রম করেছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে। জিনের পরিবর্তনের মাধ্যমে তা বন্ধ করছে এই বিশেষ উৎসেচক ক্ষরণের প্রক্রিয়াকে। যা ভাইরাল লোড কমাবার পাশাপাশি একইসঙ্গে আটকে দেবে ভাইরাসের বংশবিস্তারের প্রক্রিয়াকেও। এই থেরাপিতেও বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে তারপরও এইডস প্রতিরোধে এই থেরাপিই এখন অন্যতম হাতিয়ার গবেষকদের। এখন দেখার এই থেরাপি ঠিক কতটা সাফল্যের সঙ্গে উৎরে যেতে পারে চূড়ান্ত পরীক্ষা…
আরও পড়ুন
৪০ বছর ধরে লাগাতার ব্যর্থতা, আজও অধরা এইডসের প্রতিষেধক
Powered by Froala Editor