পৃথিবী যেমন স্থির নয়, তেমনই স্থির নয় পৃথিবীর মানচিত্রও। অত্যন্ত ধীর গতিতে হলেও বদলে যায় মহাসাগর ও মহাদেশগুলির অবস্থান। আসলে ম্যান্টলের উপরে ভাসমান টেকটনিক প্লেটের অবস্থান বদলের জন্যই এই অবস্থান বদল হয়। তবে টেকটনিক প্লেটও স্থায়ী নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো টেকটনিক প্লেটের (Tectonic Plate) জায়গা নেয় নতুন প্লেট। আর তার নিচে চাপা পড়ে যায় পুরনো প্লেটটি। কিন্তু তারপর কী হয়? বিগত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর সম্ভবত এবার তার উত্তরও পাওয়া গেল।
প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, পুরনো প্লেটিটি নিচে নেমে গেলেও তা ধ্বংস হয় না। বরং ক্রমশ ম্যান্টলের মধ্যে মিশে যেতে যেতে নতুন প্লেটটির উপর টান সৃষ্টি করে পুরনো প্লেটটি। অথচ বাস্তবে ভূমিকম্পের তরঙ্গ থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রত্যক্ষ প্রমাণ থেকে জানা যায়, পুরনো টেকটনিক প্লেট ক্রমশ ভেঙে এবং বেঁকে যেতে থাকে। অথচ তাহলে নতুন টেকটনিক প্লেটের একরৈখিক গতির কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। এই সমস্যার সমাধানে এবার সাহায্য করল কৃত্রিম বুদ্ধমত্তা (Artificial Intelligence)। টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা মিলে তৈরি করলেন নতুন একটি মডেল। ম্যান্টল এবং টেকটনিক প্লেটের ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলিকে কম্পিউটার স্টিমুলেশনের সাহায্যে নতুন এই মডেল তৈরি করেছেন তাঁরা।
সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণার ফলাফল। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, টেকটনিক প্লেট ম্যান্টলের কাছাকাছি যাওয়ার সময় বেঁকে যায়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যেতেও পারে। কিন্তু তারপরেও তার অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণবল নষ্ট হয় না। এমনকি ম্যান্টলের প্রবল উষ্ণতার মধ্যেও কয়েক মিটার নিচ পর্যন্ত এই আকর্ষণবল বজায় থাকে। ফলে একটি অখণ্ড প্লেটের মতোই আচরণ করে ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলি। যদিও এই মডেল থেকে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। তবে এতদিনের দ্বন্দ্বের মীমাংসার একটি রাস্তা পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত দ্বিমাত্রিক মডেল তৈরি করতে পেরেছেন গবেষকরা। ইতিমধ্যে ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। কম্পিউটারের সাহায্যে বিজ্ঞানের নানা অসমাধিত সমস্যার উত্তরই যে পাওয়া সম্ভব, তাই আর একবার প্রমাণ করল এই গবেষণা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রথমবার শুক্রপৃষ্ঠে ধরা পড়ল টেকটোনিক প্লেটের চলাচল, উচ্ছ্বসিত গবেষকরা