আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগের কথা। পঞ্চাশের দশকে মধ্যপ্রাচ্যের ডেড সি অঞ্চলে সন্ধান মিলেছিল প্রায় নয় শতাধিক প্রাচীন পুঁথির। তার মধ্যে অধিকাংশই হিব্রু ভাষায় লিখিত। কিছু পুঁথি আবার লেখা হয়েছিল অ্যারামিক কিংবা গ্রিক ভাষায়। এর মধ্যে অন্যতম একটি পুঁথি হল ইসাইয়াহ স্ক্রল। দুটি আলাদা আলাদা খণ্ডে পাওয়া গিয়েছিল এই প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। এবার এই বইয়ের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনলেন গবেষকরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জানাল একজন নয়, এই গ্রন্থের রচয়িতা আসলে দু’জন পৃথক ব্যক্তি।
ইসাইয়াহ স্ক্রলকে বাইবেলের প্রাচীনতম সংস্করণ হিসাবেই ধরে নেওয়া হয়। লেখা হয়েছিল আনুমানিক তৃতীয় শতাব্দীতে। ডেড সি’র নিকটবর্তী কুমরান নামক একটি গুহায় পঞ্চাশের দশকে প্রথম সন্ধান মেলে এই গ্রন্থের একটি অংশের। পরবর্তীকালে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল থেকে দ্বিতীয় অংশটি উদ্ধার করে বেদুইনরা।
প্রথমে পৃথক দুটি গ্রন্থ হিসাবেই ধরে নেওয়া হয়েছিল পুঁথি দুটিকে। পরে দুর্বোধ্য হিব্রু ভাষার পাঠোদ্ধারের ফলে জানা যায়, আসলে সেগুলি একটি পাঠ্যেরই দুটি অংশ। হাতের লেখার অদ্ভুত মিল দেখেই গবেষকরা ধরে নিয়েছিলেন পুঁথি দুটির রচয়িতা একজনই। তবে সেই ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল, তা প্রকাশ্যে এল এবার।
সত্তর বছর পেরিয়ে এসেও এই গ্রন্থের সব রহস্যের সমাধান মেলেনি আজও। আর সেই কারণেই, বেশ কিছুদিন ধরে ‘কাটিং এজ’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ইসাইয়াহ স্ক্রলের গবেষণা করছিলেন নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। পুঁথিতে ৫০০০ বারের বেশি ব্যবহৃত প্রতিটি হিব্রু অক্ষর নিয়ে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন তাঁরা। অক্ষরের সূক্ষাতিসূক্ষ্ম প্যাটার্ন পরীক্ষা করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে।
আরও পড়ুন
ঘুমন্ত বীজের রহস্য বুঝতে ১৪২ বছর ধরে পরীক্ষা
সেই অ্যালগরিদমই প্রথম সামনে আনে বিষয়টি। ডিজিটাল স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে দেখায় পারতপক্ষে সদৃশ হলেও, দুটি অংশের মধ্যে একই অক্ষরের আকারে সামান্য তারতম্য রয়েছে। দুটি ভিন্ন স্ট্রোক-এর। অর্থাৎ, তাদের রচয়িতা আলাদা। নাহলে একই ব্যক্তির হাতের লেখায় দুটি সম্পূর্ণ আলাদা অক্ষরবিন্যাস সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন
জীবন্মৃত অবস্থায় কাটত দিন; ১০০ বছর আগের ‘জম্বি’ মহামারীর রহস্য মেটেনি আজও
গবেষকদের অনুমান, সে সময় গোটা শিক্ষাব্যবস্থা নির্ভরশীল ছিল ছোটো ছোটো টোলের ওপর। সেখানেই ছোট থেকে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে যেতেন গুটিকয় শিক্ষার্থী। হাতে ধরেই তাঁদের হরফ শেখাতেন পণ্ডিতরা। ফলত সম্ভাবনা থেকে যায়, কোনো এক পণ্ডিতের দুই শিক্ষার্থী পৃথকভাবে দুটি পুঁথি লিখেছিলেন। কিন্তু শিক্ষাগ্রহণের কেন্দ্র একই হওয়ার কারণে, এতটা মিল রয়েছে দু’জনের হস্তাক্ষরে। মতান্তরে কেউ কেউ দাবি করেছেন, প্রথম খণ্ডের রচয়িতার কোনো পারিবারিক উত্তরসূরির হাতেই জন্ম দ্বিতীয় খণ্ডটির। আস সেই কারণেই অগ্রজের হস্তলিপি অনুকরণের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে আসল ইতিহাস যাই হোক না কেন, হস্তাক্ষরের এই ‘মিমিক্রি’ যে রীতিমতো ঘোল খাইয়েছে আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিকদেরও, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কম্পিউটার প্রযুক্তি এতটা উন্নত না হলে, এই তথ্য হয়তো সামনেই আসত না কোনোদিন…
আরও পড়ুন
কোথায় হারিয়ে গেল রামপুর নবাবদের কোটি কোটি টাকার গুপ্তধন? আজও জাল কাটেনি রহস্যের
Powered by Froala Editor