একমাত্র জীবিত অলিম্পিক পদকজয়ী হিসাবে শতবর্ষ পূর্ণ করলেন অ্যাগনেস কেলেটি

‘আমি জীবনকে ভালোবাসি’ – ১০০ বছর পেরিয়ে এসেও হাসতে হাসতে বলতে পারেন তিনি। জীবনের এতগুলো বছর যে কীভাবে কেটে গেল, যেন কোনো হিসাবই খুঁজে পান না। ঠিক যেমন অলিম্পিকের জিমন্যাস্টিক ফ্লোরে সময়ের হিসাব খুঁজে পেতেন না। শনিবার জীবনের ১০১ তম জন্মদিন পালন করলেন অ্যাগনেস কেলেটি। তিনিই বর্তমানে অলিম্পিকে অংশ নেওয়া সবচেয়ে বরিষ্ঠ জীবিত মানুষ। অলিম্পিক সহ আরও নানা আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক প্রতিযোগিতায় নিজেকে কিংবদন্তি প্রমাণ করেছেন আগেই। এবার জীবনের দীর্ঘায়ু দিয়েও এক রেকর্ড তৈরি করলেন তিনি।

শুধুই অলিম্পিক জয় নয়, অ্যাগনেসের জীবন সত্যিই বিশ শতকের রূপকথার মতো। ১৯২১ সালে বুদাপেস্ট শহরে জন্ম অ্যাগনেসের। সারা জীবন সাক্ষী থেকেছেন পূর্ব ইউরোপের নানা রাজনৈতিক জটিলতার। সেইসব স্মৃতিরোমন্থন করতে গিয়ে আজ তাঁর মনে পড়ে একটা কথাই। বাবা বলতেন স্বাস্থ্যই সম্পদ। আর সেই থেকেই শরীরচর্চার শুরু। এভাবেই একদিন অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। ১৯৪০ সালের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ একরকম স্থির হয়ে গেলেও শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠানই বাতিল হয়ে গেল। কারণ ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

যুদ্ধের ফলে যে শুধু অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে পারলেন না তাই নয়, আঘাত নেমে এল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও। তিনি জন্মসূত্রে ইহুদি। তাই শুরু হল ইহুদিদের উৎপীড়ন। ১৯৪১ সালেই ভেঙে গেল তাঁর জিমন্যাস্টিকের দল। তারপর এক সময় আলাদা হয়ে গেলেন পরিবার থেকেও। কিন্তু সেই লড়াইতেও জয়ী হয়েছেন অ্যাগনেস। হলোকাস্টের দিনগুলি পেরিয়ে আবার তাঁকে দেখা গেল জিমন্যাস্টিক ফ্লোরে।

১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকে যোগ দিয়েছিলেন অনেক আশা নিয়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গোড়ালিতে চোট পেয়ে বিদায় নিতে হল খালি হাতেই। তবে ১৯৫২ অলিম্পিকে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন তিনি। একটি স্বর্ণপদক ছাড়াও পেলেন দুটি রৌপ্যপদক এবং দুটি ব্রোঞ্জ পদক। ১৯৫৬ অলিম্পিকে পেলেন ৬টি স্বর্ণপদক। ৩৫ বছর বয়সে অলিম্পিকের জিমন্যাস্টিকে স্বর্ণপদক জয় করা আজও এক রেকর্ড।

এর মধ্যেই হাঙ্গেরিতে রুশ আগ্রাসন ঘিরে নতুন করে তৈরি হল যুদ্ধ পরিস্থিতি। অ্যাগনেস তখন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে আর স্বদেশে ফিরতে পারলেন না। অস্ট্রেলিয়া থেকে ইজরায়েল হয়ে দীর্ঘ প্রবাসের পর আবারও অবশ্য স্বদেশে ফিরেছেন তিনি। তবে দেশভ্রমণের ইচ্ছা নিয়েই তো বেরিয়ে পড়েছিলেন একদিন। তাঁর নিজের কথায়, ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল বিনা খরচে বহু দেশ ঘুরে দেখা যায়। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। জীবনে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ বছর কাটিয়েছেন প্রবাসেই। তবে আজও সুযোগ পেলেই যে কোনো জায়গায় বেরিয়ে পড়তে চান তিনি। ১০০ বছর বয়সে এসেও অম্লান মুখে বলতে পারেন, জীবনটা তো পৃথিবীকে দেখার জন্যই। বয়স তো সেখানে একটা সংখ্যামাত্র। সত্যিই এক বিস্ময়ের নাম অ্যাগনেস কেলেটি।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্বাগত ২০২১ : চলতি বছরে শতবর্ষ পূর্ণ করবেন যেসব খ্যাতনামা বাঙালি