২০১৯ সাল থেকেই পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল একটা কথা, পৃথিবীর ফুসফুস জ্বলছে। পৃথিবীর ফুসফুস অর্থাৎ আমাজনের জঙ্গল। অগ্নিদগ্ধ আমাজনের ছবি দেখে চমকে উঠেছিলেন মানুষ। ক্রমে সেই প্রচার স্তিমিত হয়ে এসেছে। কিন্তু আমাজনের আগুন আজও নেভেনি। বরং গত জুন মাস থেকে নতুন করে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে দাবানল। সম্প্রতি নাসার স্যাটেলাইটে দেখা গিয়েছে ব্রাজিলের ২৮৫০০টির বেশি জায়গায় আগুন জ্বলছে। আর আগুনের এক একটি কেন্দ্রের আয়তন ২০০ হেক্টরেরও বেশি। তবু এখনও উদাসীন বলসোনারো সরকার।
আমাজনের দাবানল প্রাকৃতিক নয়, এই কথা বারবার বলে আসছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাকৃতিকভাবে আমাজনে এমন আগুন লাগা সম্ভব নয়। ২০১৯ সালে একটি তৈলখনি প্রকল্পের কারণে আগুন লাগে বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়। নানারকম বাণিজ্যিক কারণে প্রতিনিয়ত অরণ্যের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবেই ইন্ধন দিচ্ছে ব্রাজিল সরকার। এমনকি প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর পক্ষ থেকে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে, আসলে ব্রাজিলের উন্নয়ন স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্যই আমাজনের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দাবানলের সাক্ষী ছিল ব্রাজিল। এক ধাক্কায় আমাজন অরণ্যের ৪০ শতাংশ উদ্ভিদবৈচিত্র হারিয়ে যায়। তারপরেও সচেতন হয়নি সরকার। গত জানুয়ারি থেকে আবারও নতুন করে শুরু হয় গাছ কাটার প্রক্রিয়া। এই বছরেই ২২ হাজার হেক্টর বনভূমির গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানাচ্ছে বেশ কিছু পরিসংখ্যান। আর জুন মাসে আগুন লাগে সেই সমস্ত অঞ্চলকে ঘিরেই। ফলে আমাজনের দাবানলের সঙ্গে যে বৃক্ষচ্ছেদনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে, তা আরও একবার প্রমাণিত হল বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে বিগত ২ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, আগস্ট মাসের পর থেকে একটু একটু করে নিয়ন্ত্রণে এসেছে আমাজনের আগুন। এবছরও তাই আগুন নতুন করে ছড়াবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু স্থায়ীভাবে কি কোনোদিন নিভবে আমাজনের আগুন? অবিলম্বে বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ হলে হয়তো এখনও আশা আছে। কিন্তু এরপর আর কিছুই করার থাকবে না।
আরও পড়ুন
কার্বন শোষণের চেয়ে নির্গমন বেশি, আমাজনের শেষের শুরু?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই বৃক্ষচ্ছেদন রুখছেন আমাজনের আদিবাসীরা